আলীর নাম এনআরসিতে ছিল। তবে ২০১৩ সালে মোরিগাঁওয়ের একটি ট্রাইব্যুনাল তাঁকে ‘বিদেশি’ ঘোষণা করেন। কারণ, কিছু কাগজপত্রে তাঁর বাবার নাম ছিল ‘সামত আলী’। আবার কিছু কাগজপত্রে ‘চামত আলী’ এবং ‘চাহমত আলী’ হিসেবে তাঁর বাবার নাম লেখা হয়েছে।
নাগরিকত্ব বাতিলের পর আলী দুই বছর বন্দিশিবিরে কাটান। ২০১৪ সালে আসাম হাইকোর্টও ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রাখেন।
আলী বলেন, তিনি এতটাই দরিদ্র যে সুপ্রিম কোর্টে এই রায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার সামর্থ্য তাঁর নেই।
‘তারা আমাকে বাংলাদেশি বানিয়ে দিল’
বাংলাদেশ সীমান্তে ঠেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে এমন অনেক মুসলিমের নাগরিকত্ব–সংক্রান্ত মামলা এখনো আদালতে বিচারাধীন।
হয়রানির শিকার এসব মুসলিমের দাবি, এ পরিস্থিতিতে তাঁদের বিরুদ্ধে সরকারের ধরপাকড় বেআইনি। তারা অবৈধ বিদেশি ধরার নামে ইচ্ছামতো হয়রানি করছে।
৫৯ বছর বয়সী সোনা বানু আল–জাজিরাকে বলেন, ‘আমি কখনো ভাবিনি, যে দেশে আমি জন্মেছি, যেখানে আমার মা–বাবা ও দাদু-দাদির জন্ম, সেই দেশ আমাকে বাংলাদেশ সীমান্তে ঠেলে পাঠাবে। তারা আমাকে বাংলাদেশি বানিয়ে দিল। অথচ বাংলাদেশকে আমি জীবনে কেবল ১০ মিটার দূর থেকে দেখেছি, নো ম্যানস ল্যান্ডের পাশে দাঁড়িয়ে।’
মোরিগাঁও জেলার মিকিরভেটা গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশে জোরপূর্বক ঠেলে দেওয়া যেন আমার জন্য মৃত্যুদণ্ডের মতো ছিল।’
চালকের ঘুম আর বেপরোয়া গতি, সব মিলিয়ে ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনা
খায়রুল ইসলাম বলেন, প্রাসঙ্গিক দলিল-দস্তাবেজ থাকার পরও ২০১৬ সালে তাঁকে ‘বিদেশি’ নাগরিক ঘোষণা করা হয়। তাঁর পরিবার ব্রিটিশ আমলের জমির দলিল আদালতে জমা দিয়েছিল, যেখানে তাঁর দাদার নামে ভূমি রেকর্ড ছিল। তিনি এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছেন।
খায়রুল বলেন, ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে কাটানো সময় আমাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। আমাদের শরণার্থীর চেয়েও খারাপ অবস্থায় রাখা হয়েছিল। আমাদের কষ্ট পুরো পৃথিবীর চোখে দৃশ্যমান ছিল। আমরা যেন ভারত ও বাংলাদেশ—উভয় দেশের জন্যই বিদেশি ছিলাম।’
কিন্তু ৫০ বছর বয়সী নিজাম আহমেদ সরকারি নথি অনুযায়ী, কোনোভাবেই বিদেশি ছিলেন না। গোলাঘাট জেলার জামুগুড়ি চা–বাগান এলাকায় ট্রাকচালক হিসেবে কর্মরত নিজামের নাম এনআরসিতে রয়েছে। তবু তাঁকে নো ম্যানস ল্যান্ডে ফেলে দেওয়া হয়।
নিজামের ছেলে জাহিদ বলেন, একটি ভাইরাল ভিডিও থেকে তিনি তাঁর বাবার আটক হওয়ার খবর
‘ফিরে এলে গুলি করব’
সম্প্রতি ভারতের বিজেপিশাসিত অন্যান্য রাজ্যেও কথিত অবৈধ বাংলাদেশিদের বিতাড়নের অভিযান ছড়িয়ে পড়েছে।
গুজরাট রাজ্যের প্রধান শহর আহমেদাবাদের পুলিশ জানিয়েছে, তারা ২৫০ জনের বেশি ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছে। এসব ব্যক্তি ‘অবৈধভাবে এখানে বসবাস’ করছেন। তাঁরা ‘বাংলাদেশি অভিবাসী’ বলে পুলিশ দাবি করছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে পুলিশ কর্মকর্তা অজিত রাজিয়ানের বরাত দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁদের বহিষ্কারের প্রক্রিয়া চলছে।