সুবর্ণভূমি ডেস্ক
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনি জোট না করতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে চিঠি লিখেছেন দলটির কেন্দ্রীয় ৩০ নেতা। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) রাতে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব মুশফিক উস সালেহীন সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ, যুগ্ম সদস্যসচিব মুশফিক উস সালেহীন, কেন্দ্রীয় সংগঠক আরমান হোসাইন, যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক খান মো. মুরসালীন, সংগঠক রফিকুল ইসলামসহ অন্যরা।
‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের দায়বদ্ধতা ও দলীয় মূল্যবোধের আলোকে সম্ভাব্য জোট বিষয়ে নীতিগত আপত্তি সংক্রান্ত স্মারকলিপি’ শিরোনামের ওই চিঠিতে নেতারা বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গত এক বছরে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের বিভাজনমূলক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, বিভিন্ন দলে গুপ্তচরবৃত্তি ও স্যাবোটেজ, এনসিপির ওপর অপকর্মের দায় চাপানোর অপচেষ্টা এবং অনলাইন ফোর্সের মাধ্যমে অপপ্রচার উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে।”
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, “বিশেষ করে এনসিপি ও তাদের ছাত্র সংগঠনের নারী সদস্যদের চরিত্রহননের চেষ্টা এবং ধর্মকে কেন্দ্র করে সামাজিক ফ্যাসিবাদের উত্থানের আশঙ্কা দেশের ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত।”
চিঠিতে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক ইতিহাস—বিশেষ করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকা, গণহত্যায় সহযোগিতা ও সে সময় সংঘটিত অপরাধে তাদের অবস্থান—বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চেতনা এবং এনসিপির দলীয় মূল্যবোধের সঙ্গে মৌলিকভাবে সাংঘর্ষিক। এ ধরনের দলের সঙ্গে কোনো জোট এনসিপির নৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করবে এবং দলের রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মত দেন তারা।
নেতারা উল্লেখ করেন, এর আগে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এরইমধ্যে প্রায় দেড় হাজার মনোনয়নপত্র বিক্রি করে ১২৫ জন প্রার্থীও ঘোষণা করা হয়েছে। এমন অবস্থায় অল্প কিছু আসনের জন্য কোনো রাজনৈতিক জোটে যাওয়া জাতির সঙ্গে প্রতারণার শামিল বলে তারা মনে করছেন।
চিঠিতে আরও বলা হয়, সম্ভাব্য এই জোটের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পরপরই দলের সমর্থক কর্মী-সংগঠকসহ একটি বড় অংশ এনসিপির প্রতি সমর্থন প্রত্যাহারের মনোভাব দেখিয়েছেন। মধ্যপন্থি ও নতুন রাজনীতির প্রত্যাশী জনগোষ্ঠীর সমর্থন হারালে ভবিষ্যতে দলটির ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়বে বলেও সতর্ক করেন নেতারা।
নীতিগত অবস্থানের ভিত্তিতে রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণের আহ্বান জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, “কৌশলগত কারণে নীতিগত অবস্থান বিসর্জন দেওয়া উচিত নয়।”
জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক জোটে না যাওয়ার বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে স্পষ্ট ও প্রকাশ্য অবস্থান নেওয়ার অনুরোধ জানান এনসিপির কেন্দ্রীয় ৩০ নেতা।