নাগরিকত্ব ছেড়ে দেশে ফিরতে অনেক নেতা ভয় পাচ্ছেন : এটিএম আজহার

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেছেন, ‘অনেক নেতা বিদেশে আছেন। দেশে আসার সাহস পাচ্ছেন না। কারণ, ইংল্যান্ডের নাগরিকত্ব লাভ করেছেন। নাগরিকত্ব ছেড়ে দেশে আসতে ভয় পাচ্ছেন। দেশে এসে যদি নিরাপদে প্রধানমন্ত্রী হতে না পারেন, তখন একূল-ওকূল দুই কূলই গেলো। কিন্তু আমাদের ভাই (যশোর-২ আসনের প্রার্থী মোসলেহ উদ্দীন ফরিদ) ত্রিশ বছর ধরে এতো সুন্দর জীবন-যাপন করছিলেন। তার আরও উপার্জনের সুযোগ ছিলো। কিন্তু আমিরে জামায়াতের কথা শুনে তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে দুনিয়ার সমস্ত সুখ-শান্তি ছেড়ে আপনাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। আপনারা কি তার পাশে দাঁড়াতে পারেন না?

তিনি বলেছেন, ‘জামায়াত দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে সর্বপ্রথম দেশকে দুর্নীতি মুক্ত করবে। আমাদের দেশটা গরিব দেশ না, সম্পদশালী। দেশে চরিত্রবান নেতার অভাব। সেকারণে দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে।’ 

রোববার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে যশোরের চৌগাছা উপজেলা জামায়াতের আয়োজনে সরকারি শাহাদৎ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘আমি ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ছিলাম, একটি না তিনটি ফাঁসির। ২৪-এর আন্দোলনে, অনেকে বলেন দ্বিতীয় স্বাধীনতা। সেই আন্দোলনের পরে মুক্ত হয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘অনেকেই বলেন- জামায়াত ক্ষমতায় গেলে আপনারা দুর্নীতি করবেন না তার প্রমাণ কী? আমাদের দুই মন্ত্রী তিনটি মন্ত্রণালয় চালিয়েছে, সেখানে সবাই খুঁজেও কোনো দুর্নীতির প্রমাণ করতে পারেনি। আমরা ক্ষমতায় গেলে ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যে বেকারত্ব দূর করবো। দেশে বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকা যাকাত আদায় করা সম্ভব। যাকাতভিত্তিক অর্থনীতির মাধ্যমে সেই টাকা দিয়ে দেশের উন্নয়ন করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, অমুসলিমদের মুসলমান বানাবো। আপনারা দেখেছেন, আওয়ামীলীগের আমলে মন্দিরে হামলা করে জামায়াত শিবিরকে দায়ী করা হয়েছে। অথচ, গত দুই বছরে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা মন্দির পাহারা দিয়েছে। নিরাপদে সনাতনী ভাইয়েরা তাদের পূজা সম্পন্ন করেছেন।’

এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘সারাদেশে দাড়িপাল্লার জোয়ার উঠেছে। এই জোয়ারে ভীত হয়ে আমাদের উপর হামলা করার চেষ্টা করছে। পরিস্কার বলতে চাই, আমরা কারও উপর হামলা করবো না। তবে, কেউ হামলা করতে আসলে দুই হাত নিয়ে যেতে পারবে না।’

তিনি বলেন, ‘যুবকরা ভোটকেন্দ্র পাহারা দেবেন। যারা আক্রমণ করতে আসবে তাদের যেমন দুই হাত আছে, আমাদেরও দুই হাত আছে। আমরা প্রতিহত করবো।’

চৌগাছা জামায়াতের আমির মাওলানা গোলাম মোর্শেদ সভাপতিত্বে জনসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন যশোর-২ (চৌগাছা-ঝিকরগাছা) আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী ঢাকা মেডিকেল কলেজ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোসলেহ উদ্দীন ফরিদ।

জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চল পরিচালক মোবারক হুসাইন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।

বক্তৃতায় মোবারক হোসেন বলেন, ‘ইসলামই পারে এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে।’

ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ‘যে দলের কর্মীরা নামাজ চলমান অবস্থায় নিজদলের কর্মীকে হত্যা করে, তাদের তো রাজনীতিই করার যোগ্যতাই নেই। স্বাধীনতার পর ৫৪ বছর পার হয়েছে। ৫৪ বছরে দলের পর দল, প্রতীকের পর প্রতীক দেখতে দেখতে আমরা ক্লান্ত।’

জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন যশোর আদ্ দ্বীন হাসপাতালের পরিচালক ডা. ইমদাদুল হক, যশোর-১ (শার্শা) আসনের এমপি প্রার্থী মাওলানা আজিজুর রহমান, যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনের এমপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট গাজী এনামুল হক, জেলা আমির ও যশোর-৪ (অভয়নগর-বাঘারপাড়া) আসনের প্রার্থী অধ্যাপক গোলাম রসুল, জেলা নায়েবে আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান, ডাকসুর ক্রীড়া সম্পাদক আরমান হোসেন, জেলার নায়েবে আমির অধ্যক্ষ আবু জাফর সিদ্দিকী, ঝিনাইদহ-৩ (মহেশপুর-কোটচাঁদপুর) আসনের প্রার্থী অধ্যাপক মতিয়ার রহমান, ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনের প্রার্থী মাওলানা আবু তালেব, শার্শার আমির উপাধ্যক্ষ ফারুক হাসান, ঝিকরগাছার আমির মাওলানা আব্দুল আলীম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের শূরা সদস্য মাওলানা হাফিজুর রহমান, মাওলানা নূরুল ইসলাম, মাওলানা আলী আকবার, মাস্টার রহিদুল ইসলাম খান, মাওলানা আব্দুল খালেক, ছাত্রশিবির নেতা মো. আবু সাঈদ প্রমুখ।