‘পানি চিবিয়ে খাওয়া’ সাম্প্রতিক সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই অদ্ভুত শোনানো শব্দবন্ধটি বেশ আলোচিত হয়েছে। যদিও মনে হতে পারে পানিকে চিবানোর কথা বলা হচ্ছে, আসলে এর অর্থ হলো পানি ধীরে ধীরে ছোট চুমুক দিয়ে মুখে কিছুক্ষণ ধরে পান করা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এভাবে পানি পান করলে হজম ভালো হয়, গলা আরাম পায় এবং শরীর দীর্ঘসময় হাইড্রেটেড থাকে।
সার্জন ডা. অর্চনা এস জানান, পানি আমাদের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।পানি মুখে কিছুক্ষণ রেখে পান করলে তা লালারসের সঙ্গে মিশে হজমকারক এনজাইমকে সক্রিয় করে এবং পাকস্থলীকে প্রস্তুত করে। অন্যদিকে হঠাৎ করে পানি গিলে ফেললে মুখ, গলা ও পাকস্থলীর স্বাভাবিক সমন্বয় নষ্ট হয়, যা অস্বস্তির কারণ হতে পারে।
ডায়েটিশিয়ান কানিকা মালহোত্রার মতে, পানিতে পুষ্টি না থাকলেও লালা নিঃসরণ হজমতন্ত্রকে সক্রিয় করে, ফলে ধীরে পানি খেলে খাবারের হজম ভালো হয় এবং অ্যাসিডিটি কমে।
ছোট চুমুকে ধীরে পানি পান করলে লালা গলা ও ইসোফ্যাগাসে একটি স্বস্তিদায়ক স্তর তৈরি করে। এতে খাবার গিলতে সুবিধা হয়, গলা কম জ্বলে এবং ঠান্ডা পানি হঠাৎ পান করলে যে তীব্র শীতলতার অনুভূতি হয়, তা হ্রাস পায়। ডা. অর্চনা আরও বলেন, ধীরে পানি পান করলে গলা ও নাকের পেশিগুলো সমন্বিতভাবে কাজ করে, ফলে কাশি, চোকিং বা ঠান্ডা পানি খেয়ে নাক দিয়ে পানি পড়ার সম্ভাবনা কমে।
এভাবে ধীরে পানি পানে শরীর বেশি সময় হাইড্রেটেড থাকে। কারণ দ্রুত পানি গিলে ফেললে তা দ্রুতই মূত্র হিসেবে বেরিয়ে যায় এবং শরীর ঠিকমতো পানি শোষণ করতে পারে না। ছোট চুমুকে পানি পান করলে তা ধীরে ধীরে রক্তে শোষিত হয়, যা শক্তি বাড়ায়, ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখে এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
কারা এই অভ্যাসে বেশি উপকার পাবেন
> যারা খুব দ্রুত খাবার খান
> পানি খেলেই যাদের পেট ফুলে যায়
> যাদের গলায় জ্বালা বা অস্বস্তি অনুভব হয়
> যারা অ্যাসিডিটিতে ভোগেন
ধীরে পানি পান করলে মুখে থাকা খাবারের কণা পরিষ্কার হয়, গলার অস্বস্তি কমে এবং শরীর হজমতন্ত্রের স্বাভাবিক তাল মিলিয়ে চলে। পর্যাপ্ত পানি পান করা শরীরের পুষ্টি পরিবহন, বর্জ্য অপসারণ ও ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষায় অপরিহার্য। তাই ব্যস্ত জীবনের মাঝেও ধীরে ও মনোযোগ দিয়ে পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস