যশোর, বাংলাদেশ || রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
Subornovumi Subornovumi Subornovumi Subornovumi Subornovumi Subornovumi
Ad for sale 870 x 80 Position (1)
Position (1)
Ad for sale 870 x 100 Position (1)
Position (1)

ভারতজুড়ে খ্রিস্টানদের ওপর হিন্দুত্ববাদীদের হামলা

সুবর্ণভূমি ডেস্ক

প্রকাশ : শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর,২০২৫, ০৪:২১ পিএম
ভারতজুড়ে খ্রিস্টানদের ওপর হিন্দুত্ববাদীদের হামলা

Subornovumi বড়দিন উপলক্ষে ভারতের একটি গির্জায় হামলা চালিয়ে উৎসবের উপকরণ জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দেয় হিন্দুত্ববাদীরা: ছবি ভারতীয় মিডিয়া থেকে সংগৃহীত ছবি:

কথায় কথায় বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক, জঙ্গি তকমা দেওয়া ভারতের অসাম্প্রদায়িক চরিত্রের মুখোশ খুলে গেছে আরও আগে। তবে, এবার বড়দিন উপলক্ষে যা হলো তাকে নারকীয় না বলে উপায় নেই। হিন্দুত্ববাদীরা ২৪ ও ২৫ ডিসেম্বর ভারতজুড়ে হামলা চালিয়ে পণ্ড করে দিয়েছে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব।

সরকারি দল বিজেপি, বজরং দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদসহ বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক সংগঠনের নেতাকর্মীরা একের পর এক গির্জায় আক্রমণ, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ আর গির্জার সামনে মন্ত্রপাঠ করেই নিবৃত হয়নি- জঙ্গী এই গোষ্ঠী নানা হুমকি-ধামকিও দিয়েছে।

অথচ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর মোদী এদিন দিল্লির এক গির্জায় গিয়ে প্রার্থনা করে বিশ্বকে দেখাতে চাইলেন তার ভারত কতটা অসম্প্রদায়িক। মোদী বা তার সরকারের পক্ষ থেকে নিজ দল বিজেপি এবং সরকারসমর্থক বজরং দল ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদসহ অন্যান্য হিন্দুত্ববাদীদের এই সাম্প্রদায়িক উন্মত্ততার বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো একটিও বাক্য উচ্চারণ করা হয়নি।

বড়দিন (২৫ ডিসেম্বর) হলো খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সবথেকে বড় ধর্মীয় উৎসব। এদিন, দিল্লির একটি গির্জায় গিয়ে প্রার্থনা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

এরইমাঝে সবথেকে বড় যে সংবাদটি মিডিয়াজুড়ে স্থান করে নিয়েছে তা হলো হিন্দুত্ববাদীদের উন্মাত্ততা। তারা উত্তর প্রদেশ. আসাম, মধ্য প্রদেশ, রাজস্থান এবং হরিয়ানা রাজ্যে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ওপর নারকীয় হামলা চালিয়েছে। এসব রাজ্য বিজেপিশাসিত। এর বাইরে হামলা ও তান্ডব চলেছে কেরলেও।

আন্তর্জাতিক মিডিয়ার খবর অনুযায়ী, আসামের নলবাড়িতে একটি খ্রিস্টান মিশনারি স্কুলে তাণ্ডব চালায় বজরং দল। তারা নলবাড়ি জেলার পানিগাঁওয়ে সেন্ট মেরি স্কুলে প্রবেশ করে তান্ডব চালায়। প্রধানত বজরং দল এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) বিভিন্ন রাজ্যে বড়দিন উদ‌যাপনের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নিয়েছিল। তাদের সাথে ছিল ক্ষমতাসীন বিজেপি।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, বড়দিন উপলক্ষে সেন্ট মেরি স্কুলটি সাজানো হয়েছিল। ক্রিসমাস ট্রি লাগানো হয়েছিল। হিন্দুত্ববাদীরা সব খুলে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা এতটাই উন্মত্ত ছিলো যে, স্কুলের কাছেই এক দোকানে ক্রিসমাস উপলক্ষে বিক্রির জন্য রাখা সামগ্রীও তছনছ করে।

একই ধরনের ঘটনা ঘটে বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) ও বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দেশের বিজেপিশাসিত অন্যান্য অনেক রাজ্যেও।

জয়পুর, বিদিশা, ভোপাল, গুয়াহাটি, বেরিলি, ইন্দোরের মতো শহর ছাড়াও আম আদমি পার্টিশাসিত পাঞ্জাব ও বামশাসিত কেরালার বিভিন্ন শহরে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরং দল বিপণিবিতান, স্কুল, দোকান, এমনকি উৎসবমুখর মানুষদের ওপরেও হামলা চালায়।

কেরালায় পালাক্কড় জেলায় পুদুস্সেরি গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আরএসএসের সদস্যেরা ক্যারল গাওয়া বন্ধ করে দেন। বিজেপিশাসিত উত্তরাখন্ডের হরিদ্বারে গঙ্গার ধারে রাজ্য পর্যটন দপ্তর পরিচালিত এক হোটেলে বড়দিনের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়।

মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরে এক গির্জায় বড়দিনের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা করা হয়। অভিযোগ, ওই নারীকে লাঞ্ছনা করেন স্থানীয় বিজেপিনেত্রী অঞ্জু ভার্গব।

নেত্রীর অভিযোগ, ওই নারী নাকি ধর্মান্তকরণের সঙ্গে যুক্ত। খোদ দিল্লির লাজপতনগরে একদল নারী-পুরুষকেও বড়দিন উদযাপনে বাধা দেওয়া হয়। তারা সান্তা ক্লজের লালসাদা টুপি পরে বড়দিন উদযাপন করছিলেন।

বড়দিনের আগে গত মঙ্গলবার ক্যাথলিক বিশপস কনফারেন্স অব ইন্ডিয়া খ্রিস্টানদের ওপর হামলার আশঙ্কায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছিল। সেই আশঙ্কাই সত্য হলো।

এই নারকীয় সাম্প্রদায়িক উন্মত্ততার বিরুদ্ধে একটি কথাও বলেনি ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বজাধারী ভারতের ধর্মান্ধ বিজেপি সরকার। কথা বলেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। উপরন্তু, দিল্লি পুলিশ আম আদমি পার্টির কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে খ্রিস্টানদের ভাবাবেগে আঘাত করার অভিযোগে এফআইআর দায়ের করেছে। যাকে সাজানো এবং ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখছেন দলটির নেতারা।

আম আদমি পার্টি কয়েক দিন আগে এক্সে একটি পোস্ট দিয়েছিল। তাতে দেখা যায়, সান্তা ক্লজ সাজা একজন দিল্লি এসে দূষণে জেরবার হয়ে পড়েছেন। ওই পোস্ট খ্রিস্টানদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দিয়েছে-এ অভিযোগে দিল্লি পুলিশ সৌরভ ভরদ্বাজসহ তিন নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে।

আম আদমি পার্টির নেতাদের দাবি, তারা এই পোস্টে দিল্লির দূষণের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। কারও ধর্মীয় আবেগে আঘাতের প্রশ্নই ওঠে না। বিজেপির নির্দেশে দিল্লি পুলিশ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে নেমেছে।

উল্লেখ্য, বড়দিন উপলক্ষে ভারতজুড়ে সংখ্যালঘু খ্রিষ্টানদের ওপর এমন আক্রমণ অতীতে দেখা যায়নি।

প্রসঙ্গত, ভারতের বিজেপি এবং তাদের দলীয় সরকারের নেতারা নানা সময়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের নানা অভিযোগ উত্থাপন করে থাকেন। তাদের সেই ‘বয়ান’ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মিথ্যা হলেও তা বলতে একটুও কসুর করনে না তারা।

সাম্প্রতিক সময়ে এসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের এই বয়ান রীতিমতো আক্রমণাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। অথচ, নিজেদের দেশের সাম্প্রদায়িক উন্মত্ততা ও হিন্দুত্ববাদী জঙ্গীদের নারকীয় তৎপরতা নিয়ে দেশটির সরকার এবং তাদের লোকজন একটি কথাও উচ্চারণ করেন না।

ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

Ad for sale 270 x 200 Position (2)
Position (2)