যশোর, বাংলাদেশ || সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

Cox’s Bazar

Chottogram,Bangladesh

Madonna Riggs
প্রকাশ : শনিবার, ৩ মে,২০২৫, ০১:০৩ পিএম
Cox’s Bazar

সম্প্রতি ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এক হামলার জেরে দিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে নতুন করে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। পারমাণবিক শক্তিধর দেশ দুটির মধ্যে বিরোধের পারদ পৌঁছেছে চরমে। এখন প্রশ্ন হলো, কাশ্মীর নিয়ে ভারত আর পাকিস্তানের ঐতিহাসিক বৈরিতার শুরু কোথায়? 

 

১৯৪৭ সালের আগস্টে ব্রিটিশ শাসনের শেকল ভেঙে স্বাধীনতা পায় ভারত ও পাকিস্তান। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, কাশ্মীর বিতর্কের শুরু এই স্বাধীনতার অনেক আগে থেকেই। ব্রিটিশ ভারতের বিভক্তির পরিকল্পনায় বলা হয়েছিল, কাশ্মীর ইচ্ছে অনুযায়ী ভারত অথবা পাকিস্তান- যে কারো সঙ্গেই যেতে পারবে। কাশ্মীরের সে সময়কার মহারাজা হরি সিং চাইছিলেন স্বাধীন থাকতে কিংবা ভারতের সঙ্গে যেতে। অন্যদিকে পশ্চিম জম্মু এবং গিলগিট-বালতিস্তানের মুসলিমরা চাইছিলেন পাকিস্তানের সঙ্গে থাকতে।

সময়টা ১৯৪৭ সালের অক্টোবর। পাকিস্তানের পশতুন উপজাতীয় বাহিনীগুলোর আক্রমণের মুখে হরি সিং ভারতে যোগ দেওয়ার চুক্তিতে সই করেন। তিনি ভারতের পক্ষ থেকে সামরিক সহায়তাও পান। আর তাতেই শুরু হয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ। ১৯৪৮ সালে ভারত কাশ্মীরের দাবি নিয়ে জাতিসংঘে যায়। জাতিসংঘের ৪৭ নম্বর প্রস্তাবে কাশ্মীরে গণভোট, পাকিস্তানের সেনা প্রত্যাহার এবং ভারতের সামরিক উপস্থিতি ন্যূনতম পর্যায়ে কমিয়ে আনার আহ্বান জানানো হয়।

একই বছর কাশ্মীরে যুদ্ধবিরতি বলবৎ হয় ১৯৪৮ সালে, তবে পাকিস্তান সেনা প্রত্যাহার করতে অস্বীকার করে। তখন থেকেই কাশ্মীর কার্যত পাকিস্তান ও ভারত নিয়ন্ত্রিত দুই অংশে ভাগ হয়ে যায়। পরে ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে চীন কাশ্মীরের আকসাই-চিন অংশের নিয়ন্ত্রণ নেয়। পরের বছরই পাকিস্তান কাশ্মীরের ট্রান্স-কারাকোরাম অঞ্চলটি চীনের হাতে ছেড়ে দেয়। সেই থেকে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তান, ভারত ও চীন- এই তিন দেশের মধ্যে ভাগ হয়ে আছে।

১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান তৃতীয়বারের মতো যুদ্ধে জড়ায়। এর পরের বছর সিমলা চুক্তির মধ্যে দিয়ে বর্তমানের ‘লাইন অব কন্ট্রোল’ বা নিয়ন্ত্রণরেখা চূড়ান্ত রূপ পায়। ১৯৮৪ সালে ভারত সিয়াচেন হিমবাহ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়- যা অবশ্য নিয়ন্ত্রণরেখার মধ্যে পড়ে না। ১৯৯৯ সালে ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তান-সমর্থিত বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়ায়। সেই ‘কারগিল সংকটের’ আগেই অবশ্য দুই দেশই পারমাণবিক শক্তির অধিকারী হয়ে ওঠে।

ভারত শাসিত কাশ্মীরের অনেকেই চান না যে এলাকাটি ভারতের শাসনে থাকুক। তারা চান- হয় পূর্ণ স্বাধীনতা, নতুবা পাকিস্তানের সঙ্গে সংযুক্তি। ভারত-শাসিত জম্মু ও কাশ্মীরের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশেরও বেশি মুসলিম। এটিই হলো ভারতের একমাত্র রাজ্য যেখানে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।

ভারতের এই রাজ্যে বেকারত্বের হার অত্যন্ত উঁচু, তা ছাড়া রাস্তায় বিক্ষোভ এবং বিদ্রোহীদের দমনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর নীতি পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করেছে। কাশ্মীরে বিদ্রোহী তৎপরতা বড় আকারে শুরু হয় ১৯৮৭ সালে বিতর্কিত স্থানীয় নির্বাচনের পর জেকেএলএফ নামে সংগঠনের উত্থানের মধ্য দিয়ে। ভারতের অভিযোগ, পাকিস্তান সীমান্তের ওপার থেকে যোদ্ধাদের পাঠায়- তবে পাকিস্তান বরাবরই তা অস্বীকার করে।  

১৯৮৯ সালের পর থেকে কাশ্মীরে সহিংস বিদ্রোহ নানা উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে গেছে। তবে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে ২২ বছর বয়সী বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা বুরহান ওয়ানি নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে এক লড়াইয়ে নিহত হওয়ার পর থেকে পুরো উপত্যকায় ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত কাশ্মীরে বিক্ষিপ্ত সহিংসতা চলছেই। আর এই সহিংসতা ঘিরে দুই দেশের মধ্যে অসন্তোষ, অবিশ্বাস বাড়ছেই।

ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন