যশোর, বাংলাদেশ || রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫
Subornovumi Subornovumi Subornovumi Subornovumi Subornovumi Subornovumi
Ad for sale 870 x 80 Position (1)
Position (1)
Ad for sale 870 x 100 Position (1)
Position (1)

কৃষ্ণ নন্দীকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য ও ছবি ফাঁস

সুবর্ণভূমি ডেস্ক

প্রকাশ : শনিবার, ৬ ডিসেম্বর,২০২৫, ১১:০৪ পিএম
আপডেট : শনিবার, ৬ ডিসেম্বর,২০২৫, ১১:০৯ পিএম
কৃষ্ণ নন্দীকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য ও ছবি ফাঁস

ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ নন্দীকে খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আসনে প্রথমবারের মতো জামায়াতের প্রার্থী করা হয়েছে। এর আগে এই আসনে প্রার্থী ছিলেন মাওলানা আবু ইউসুফ। ৩ ডিসেম্বর খুলনায় ৮ দলের বিভাগীয় সমাবেশে এসে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান তাকে প্রার্থী ঘোষণা করেন। ধর্মীয় পরিচয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও জামায়াতের প্রার্থী হওয়ায় কৃষ্ণ নন্দীকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।

এছাড়াও সম্প্রতি ভারতের হিন্দুত্ববাদী সংগঠেনর এক নেতার সঙ্গে তোলা ছবি ভাইরাল হয়েছে স্যোশাল মিডিয়ায়ায়।সেটি নিয়েও শুরু হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক।

কৃষ্ণ নন্দী পেশায় ব্যবসায়ী। তার গ্রামের বাড়ি ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরে। পৈত্রিক নিবাসও সেখানেই। চুকনগর দিব্যপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষ করে তিনি পারিবারিক ব্যবসার হাল ধরেন। মোটরসাইকেল শোরুম, তেল, রড-সিমেন্ট ও টিনের ব্যবসা ছিল তার। পারিবারিকভাবে তার বাবা মুসলিম লীগ নেতা খান এ সবুরের অনুসারী ছিলেন। কৃষ্ণ নন্দীর দাবি, ২০০৩ সালে খুলনা-১ আসনের সাবেক জামায়াতের এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ারের হাত ধরে তিনি জামায়াতে যোগ দেন।

তবে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক সহিংসতায় ক্ষুব্ধ জনতা তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসভবনে হামলা–অগ্নিসংযোগ করার আগ পর্যন্ত তাকে প্রকাশ্যে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় দেখা যায়নি। এরপরই তিনি পুনরায় জামায়াতে সক্রিয় হন এবং উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পান। ৩১ অক্টোবর জামায়াতের হিন্দু সম্মেলনে তার নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ যোগদান করে।

এছাড়া গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওয়ার্ল্ড হিন্দু স্ট্রাগল কমিটি বাংলাদেশের সভাপতি শিপন কুমার বসুর সঙ্গে কৃষ্ণ নন্দীর কয়েকটি ছবি ভাসছে। সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের তার ফেসবুক পোস্টে ওই দুজনের ছবি শেয়ার করেছেন। ছবিটি ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বলে উল্লেখ করা হয়। এরপর থেকে খুলনাবাসী ছবিটিকে শেয়ার করে উল্লেখ করছেন, কৃষ্ণ নন্দীর ভারতের বিশেষ একটি সংস্থার সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। বিশেষ করে বিএনপির কর্মী সমর্থকরা ছবি এবং সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরের পোস্ট শেয়ার করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এই বিষয়টি নিয়ে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে কৃষ্ণ নন্দীকে।

কৃষ্ণ নন্দীর বিষয়ে জুলকারনাইন সায়ের জানিয়েছেন, খুলনায় ৮ দলের বিভাগীয় সমাবেশে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান খুলনা-১ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর হিন্দু কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ নন্দীর নাম ঘোষণা করেন। 

আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের অত‍ি ঘনিষ্ঠ এই কৃষ্ণ নন্দী কিভাবে জনপ্রিয় স্থানীয় জামায়াত নেতা শেখ আবু ইউসুফকে হটিয়ে জামায়াতে ইসলামীর মনোনয়ন পেলেন সেটা নিয়ে অনেকেই বেশ দ্বিধান্বিত।  প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধান করে কৃষ্ণ নন্দীর উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্বস্ত সূত্র মারফত নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিশেষ একটি সংস্থার সঙ্গে কৃষ্ণ নন্দীর নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব ওয়ার্ল্ড হিন্দু স্ট্রাগলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শিপন কুমার বসুর সঙ্গে কৃষ্ণ নন্দীর অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান।প্রমাণ হিসেবে শিপন ও কৃষ্ণ নন্দীর কিছু ছবিও শেয়ার করে সায়ের জানিয়েছেন, একই বৈঠকে ভারতের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা ইনটেলিজেন্স ব্যুরোর (আইবি) সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

স্ট্যাটাসের সঙ্গে যুক্ত করা তিনটি ছবির বিষয়ে অনুসন্ধানী এই সাংবাদিক জানান, প্রাথমিকভাবে ছবি তিনটির (এনক্রিপটেড অ্যাপ ব্যবহার করে পাঠানো ফাইল হওয়ায় মেটাডেটা পাওয়া সম্ভব হয়নি) ফরেন্সিক এনালাইসিস করে কোন ধরনের এআই ব্যবহার বা টেম্পারিং খুঁজে পাওয়া যায়নি। শিপন কুমার বসুর সঙ্গে তোলা দুটি ছবিতে উল্লেখ করা সময়ে (১৫.০২.২০২৩) কৃষ্ণ নন্দী ভারতে অবস্থান করছিলেন, ‍যা তার ভ্রমণ সংক্রান্ত তথ্য যাচাই করে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ২২ বার তিনি ভারত গমন করেছেন বলে পোস্টে উল্লেখ করেন সায়ের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘এই ছবির ব্যক্তিকে আমি চিনি না। তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। একটি এআই জেনারেটেড ছবি ছড়িয়ে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে।’

এদিকে কৃষ্ণ নন্দীর রাজনৈতিক যাত্রা নিয়ে বিতর্কও কম নয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সাধারণ মানুষের অভিযোগ, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কৃষ্ণ নন্দী ছিলেন সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের ঘনিষ্ঠজন। মন্ত্রীর সঙ্গে তার বিভিন্ন কর্মসূচির ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে আছে। চুকনগর এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, ক্ষুব্ধ জনতা কৃষ্ণ নন্দীকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ মনে করে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িতে আগুন দেয়। নিজেকে বাঁচাতেই এখন জামায়াতের ঘাড়ে বসেছেন তিনি।

এ অভিযোগ অস্বীকার করে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ব্যবসায়ী হিসেবে মন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ঘনিষ্ঠতার কথা অতিরঞ্জিত করা হচ্ছে। নারায়ণ চন্দ্র চন্দ মন্ত্রী হওয়ার পর ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে তাকে ফুল দেওয়া ছবি নিয়ে এখন কাদা–ছোড়াছুড়ি হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, ২০০৩ সাল থেকেই জামায়াতের রাজনীতিতে যুক্ত এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সংখ্যালঘুবান্ধব মনোভাবের কারণেই তিনি এ দলের প্রতি আস্থাশীল।

অপরদিকে, খুলনা-১ আসনটি দেশের সবেচেয়ে বেশি হিন্দু অধ্যুষিত আসনগুলোর একটি। দাকোপ উপজেলায় ৫৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং বটিয়াঘাটায় ২৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ বাসিন্দা হিন্দু। সবমিলিয়ে এ আসনের প্রায় ৪৩ শতাংশ ভোটারই হিন্দু সম্প্রদায়ের। খ্রিষ্টানরাও আছেন ২ শতাংশের বেশি। স্বাধীনতার পর থেকে এ আসনে সংখ্যালঘু প্রার্থীরাই অধিকাংশবার নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৭৩ সালের প্রথম নির্বাচনে কুবের চন্দ্র বিশ্বাস, পরেরবার প্রফুল্ল কুমার শীল জয়ী হন। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা জয়ী হলেও আসন ছাড়ার পর উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরূপে পঞ্চানন বিশ্বাস জয় পান। পরবর্তীতে ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ননী গোপাল মন্ডল ও পঞ্চানন বিশ্বাস পর্যায়ক্রমে জিতেছেন। ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে পুনরায় ননী গোপাল মন্ডল বিজয়ী হন। এ কারণে রাজনৈতিকভাবে এ আসন আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবেই পরিচিত।

জামায়াত ১৯৯৬ সালে মাওলানা আবু ইউসুফকে প্রার্থী করলেও এরপর পাঁচ দফা নির্বাচনে আর প্রার্থী দেয়নি। প্রায় তিন দশক পর এবারের নির্বাচনে প্রথমে মাওলানা ইউসুফকে মনোনয়ন দিয়ে পরে পরিবর্তন করে কৃষ্ণ নন্দীকে চূড়ান্ত প্রার্থী করেছে দলটি। জামায়াতের প্রার্থী বদল নিয়েও মাঠে নতুন আলোচনা শুরু হয়।

নিজে মনোনয়ন হারালেও মাওলানা আবু ইউসুফ বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কৃষ্ণ নন্দীই প্রার্থী। আমি প্রচারণা চালাচ্ছি।’

অন্যদিকে বিএনপিও এ আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে রয়েছে। দলটি পূর্বের মতো এবারও আমীর এজাজ খানকে প্রার্থী করেছে। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থী উল্লেখযোগ্য ভোট পাননি কখনো। তবে আমীর এজাজ খান আসনটিতে উল্লেখযোগ্য ভোট পেয়েছেন। এ বাস্তবতায় জামায়াতের কৃষ্ণ নন্দী ভোটের লড়াইয়ে কতটা দাঁড়াতে পারবেন তা নিয়ে ভোটারদের মধ্যে চলছে জোর আলোচনা।

তবে কৃষ্ণ নন্দীর দাবি, এ আসনে তার ব্যাপক আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতজন রয়েছে, যারা তার পক্ষে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘দাকোপ–বটিয়াঘাটা হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা। এখানকার মানুষ আমাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করেছে। হিন্দু– মুসলিম সবাইকে একত্রিত করেই আমি নির্বাচন করব।’

সব মিলিয়ে খুলনা-১ আসনে জামায়াতের কৃষ্ণ নন্দীকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত রাজনৈতিক মাঠ, সরব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ভোটারদের মনে প্রশ্ন তিনি কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকতে পারবেন।

সৌজন্যে: দৈনিক যুগান্তর

ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

Ad for sale 270 x 200 Position (2)
Position (2)