সম্পাদকীয়
যশোরের ঐতিহ্যবাহী বিখ্যাত খাবার কী? এক নামে সবাই বলবেন খেজুরের রস-গুড়-পাটালি। বস্তুত যশোরের গুড়-পাটালির প্রতি আকর্ষণ সারা দেশের মানুষের, এমনকি প্রবাসে থাকা লাখো বাঙালির। স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় খাদ্যটি সঙ্গত কারণেই ‘জিআই পণ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ফিবছর শীত মওসুমে যশোরের গুড়-পাটালির ব্যবসা রমরমা হয়ে ওঠে।
খেজুরের রস গাছ থেকে উৎপন্ন হয়। তা প্রক্রিয়াজাত করার পর গুড় বা পাটালিতে রূপান্তরিত হয়। এখানে মূল উপাদান খেজুরের রস। খেজুরগাছ সারা দেশেই কম-বেশি আছে। তবে প্রাকৃতিক কারণে যশোরের রস তুলনায় অনেক বেশি মিষ্টি এবং সুগন্ধ ও স্বাদযুক্ত। সঙ্গত কারণেই এই রস থেকে তৈরি গুড়-পাটালির মানও সেরা।
খেজুরগাছ কমে যাওয়া, গাছি সংকটসহ নানা কারণে যশোরে আগের মতো রস-গুড় উৎপাদিত হয় না। অথচ এর রয়েছে বিপুল চাহিদা। ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। যশোরের গুড়-পাটালির নামে যা বিক্রি হচ্ছে, তা মূলত ভেজাল পণ্য।
হিসেব করে দেখা গেছে, ভালো মানের এক কেজি গুড় বা পাটালি তৈরি করতে খরচ হয় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। অথচ বাজারে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় যে কেউ পেয়ে যেতে পারেন এক কেজি গুড়-পাটালি। ভাবা যায়! বিক্রেতাদের হাতে কি জাদুর কাঠি আছে? প্রশাসনের নাকের ডগায়ই এমনটি ঘটে চলেছে প্রকাশ্যে। সবাই নির্বিকার।
সনাতন ধারার বাজার থেকে গুড়-পাটালির মতো পণ্য এখন অনলাইনেও সহজপ্রাপ্য। বাংলাদেশে অনলাইনে ব্যবসা নিয়ে নানা কথাবার্তা আছে। এখানে যেমন আছে প্রতিষ্ঠিত অনলাইন বিজনেস প্লাটফর্ম, তেমনি আছে ফেসবুকভিত্তিক হঠাৎ গজিয়ে ওঠা ‘উদ্যোক্তা’। ফলে জালিয়াতির সুযোগ অবারিত।
একটি এলাকায় স্বনামধন্য ঐতিহ্যবাহী পণ্য খুব কমই থাকে। সমাজের দায়িত্ব সেই সুনাম, ঐতিহ্য ধরে রাখা। এই কাজে সরকারি কর্তৃপক্ষকে যেমন এগিয়ে আসতে হবে, ভূমিকা রাখতে হবে সুধীমহলকেও। এখন পর্যন্ত যশোরবাসীর মনোযোগ এদিকে আছে বলে মনে হয় না। আমরা মনে করি, সময় শেষ হয়ে যায়নি। যে করেই হোক, সুনাম ফিরিয়ে আনতে হবে। জালিয়াতদের খপ্পর থেকে রক্ষা করতে হবে যশোরের ঐতিহ্যবাহী খাবারটিকে।