বিশেষ লেখা
ফিলিপ বাবলু বিশ্বাস
প্রভু যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন আজ। শুভ বড়দিন।
আজ থেকে ২০২৫ বছর পূর্বে প্যালেস্টাইনের বৈতলেহম নামক দায়ুদের নগরে এক গোয়ালঘরে জন্ম নিয়েছিলেন মানুষের মুক্তিদাতা শান্তিরাজ প্রভু যিশু (ত্রাণকর্তা)। খ্রিস্ট (খ্রিস্ট শব্দের অর্থ অভিষিক্ত)। তাঁরই জন্ম-উৎসব পালনের এই আয়োজনের নাম ‘বড়দিন’।
যিশুর জন্ম-বিবরণ: যিশু খ্রিস্টের মাতা মরিয়ম ঈশ্বরের দৃষ্টিতে ছিলেন পূণ্যবতী। ঈশ্বর তাকেই বেছে নিয়েছিলেন মানুষের পরিত্রাতার মা হবার জন্য। ঈশ্বরের পুত্রের মা হওয়ার জন্য। একই নগরের এক যুবক জোশেফের প্রতি বাগদত্তা হলে তাদের সহবাসের পূর্বে জানা গেল, তার গর্ভ হয়েছে পবিত্র আত্মা হতে। আর তার স্বামী জোশেফ।
ধার্মিক হওয়াতে ও তাকে সাধারণের কাছে নিন্দার পাত্র করতে ইচ্ছা না করাতে গোপনে ত্যাগ করার মানস করলেন। তিনি এই সকল ভাবছিলেন। এমন সময় দেখেন, প্রভুর এক দূত স্বপ্নে তাকে দর্শন দিয়ে বললেন, জোশেফ, দায়ুদ-সন্তান, তোমার স্ত্রী মরিয়মকে গ্রহণ করতে ভয় করো না, কেননা তার গর্ভে যে জন্ম নিয়েছে, তা পবিত্র আত্মা হতে হয়েছে; আর তিনি পুত্র প্রসব করবেন, এবং তুমি তাঁর নাম যিশু (ত্রাণকর্তা) রাখবে। কারণ তিনিই আপন প্রজাদের তাদের পাপ হইতে ত্রাণ করবেন। এই সব ঘটলো, যেন ৭৪০ বছর আগেই যিশাইয় ভাববাদী দ্বারা কথিত প্রভুর এই বাক্য পূর্ণ হয়। ‘দেখো, সেই কন্যা গর্ভবতী হবে, এবং পুত্র প্রসব করবে। আর তার নাম রাখা যাবে ইম্মানুয়েল।’ অনুবাদ করলে এর অর্থ- আমাদের সঙ্গে ঈশ্বর। পরে জোশেফকে প্রভুর দূত তাকে যেরূপ আদেশ দিয়েছিলেন, সেইরূপ করলেন।
সেই সময়ে সম্রাট আগস্ত কৈশোরের এই আদেশ জারি হলো যে, সমুদয় পৃথিবীর লোক নাম লেখাবেন (আদমশুমারি)। তখন জোশেফ মরিয়মকে নিয়ে গালিলের নাসরত নগর হতে নিজের যিহুদিয়ার বৈতলেহম নামক দায়ুদের নগরে গেলেন। কারণ তিনি দায়ুদের কুল ও গোষ্ঠীজাত ছিলেন। তিনি বাগদত্তা স্ত্রী মরিয়মের সঙ্গে নাম লিখে দেওয়ার জন্য গেলেন। তখন ইনি গর্ভবতী (পবিত্র আত্মার প্রভাবে) ছিলেন। তাারা সেই স্থানে আছেন। এমন সময়ে মরিয়মের প্রসবকাল সম্পূর্ণ হলো। ওই নগরে এতো লোক জড়ো হয়েছিল যে, পান্থশালায় জায়গা না থাকায় অবশেষে প্রচণ্ড শীতের রাতে গোয়ালঘরেই আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখানেই তিনি পুত্র প্রসব করলেন এবং তাঁকে কাপড়ে জড়িয়ে যাবপাত্রে শুইয়ে রাখলেন। ওই অঞ্চলে মেষপালকেরা মাঠে রাত্রিকালে নিজেদের পাল চৌকি দিচ্ছিল। প্রভুর এক দূত তাদেরকে বললেন, ‘ভয় করো না, কেননা দেখ, আমি তোমাদের মহানন্দের সুসমাচার জানাচ্ছি। সেই আনন্দ সব লোকেরই হবে; কারণ আজ দায়ুদের নগরে তোমাদের জন্য ত্রাণকর্তা জন্মেছেন; তিনিই খ্রিস্ট প্রভু যিশু।
যিশুর জন্মসংবাদ শুনে প্রথমে রাখালরা এসেছিলেন। তারপর আকাশে নির্দিষ্ট তারা দেখে পূর্বদেশীয় তিনজন পণ্ডিত স্বর্ণ, কুন্দুর ও গন্ধরস নিয়ে খ্রিস্টরাজকে প্রণাম জানাতে এসেছিলেন। তাই আজও বড়দিন উপলক্ষে প্রত্যেক বাড়িতে সাজসজ্জায় একটি তারাতে লাইটিং করা হয়। অনেক জায়গাতেই গোশালা বানানো হয়, গিফট এক্সচেঞ্জ করা হয়, যিশুর জন্মবার্তা জানানোর জন্য বাড়িতে বাড়িতে কীর্তন গান পরিবেশন করা হয়।
দিনের সময় হিসাবে বড় নয়, কিন্তু শান্তিরাজের জন্ম সব মানুষের মুক্তির জন্য তাই মহামানবের পৃথিবীতে আসার দিনটিই সত্যিই জগতে মানব ইতিহাসে বড়দিন। মানুষ প্রতীক্ষায় থাকে নতুনভাবে বরণ করে নিতে, কখন আসবে সেই পুরনো নতুনের আমেজ নিয়ে! বড়দিন এমনই একটি শুভক্ষণ আমাদের ধর্মীয় জীবনে পর্বগুলো এরকমভাবেই নতুনরূপে আমাদের চেতনায় ধরা দেয়। এই খ্রিস্টের জন্মকে কেন্দ্র ধরেই সময় গণনা করা হয়ে থাকে। যিশু খ্রিস্টের জন্মের আগের ঘটনার হিসাব করা হয়ে থাকে খ্রিস্ট-পূর্বাব্দ এবং জন্মের পরে হিসাব করা হয় খ্রিস্টাব্দ।
লেখক: খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ, যশোর জেলা শাখার যুগ্ম-সম্পাদক
*মতামত লেখকের নিজস্ব