যশোর, বাংলাদেশ || রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
Subornovumi Subornovumi Subornovumi Subornovumi Subornovumi Subornovumi
Ad for sale 870 x 80 Position (1)
Position (1)
Ad for sale 870 x 100 Position (1)
Position (1)

চিত্রকলা

চিত্রপটে ‘রোয়া দ্ব’

রেজাউর রহমান

প্রকাশ : শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর,২০২৫, ১২:০০ পিএম
চিত্রপটে ‘রোয়া দ্ব’

লোগো আসো রেই পউং থং কা প্রেঃ রে লা, লাগো মেনন চারেকা
অনুবাদ: পৃথিবীকে দেখতে পাহাড়ে উঠুন, পৃথিবী যেন আপনাকে না দেখে -ডেভিড ম্যাককালো

পৃথিবীর উপরিভাগের ভূ-গঠন খুবই বৈচিত্র্যময়। কখনো সমতল কখনো খাড়া পর্বতময়, কখনো বিস্তীর্ণ জলরাশি। প্রকৃতির এই গঠনও ভূমির বৈচিত্র্যের ওপর নির্ভরশীল। মানুষ ও তাদের জীবনযাত্রা, এই গঠনের উপর নির্ভর করে এগিয়েছে। আবহাওয়ার ও জলবায়ুর পরিবর্তনে মানুষের শারীরিক গঠন ও জীবন প্রণালীরও বিবর্তন দেখা যায়। ফলে মানুষের মধ্যেও নানা বৈচিত্র্য লক্ষণীয়। সমতলের মানুষের গঠন তাদের ভাষা-কৃষ্টি একরকম হলেও পার্বত্য বা সুউচ্চ পাহাড়শৃঙ্গের মানুষের জীবনের গল্প একদমই ভিন্ন। প্রকৃতির নানা চড়াই-উৎরাই তারা সংগ্রামের ভেতর দিয়ে বেঁচে থাকে। তাদের ভাষার ভিন্নতা, সংস্কৃতির ভিন্নতা সর্বোপরি নিজস্বতা থাকে জাতিতে, গোত্রে। বাংলাদেশ পৃথিবীর বৃহৎ ব-দ্বীপ অঞ্চল, এর প্রায় সমতল হলেও পার্বত্য অংশ আছে। পার্বত্য অংশের মানুষের আছে নিজস্ব ভাষা, আছে সংস্কৃতি এবং তা অতি সুপ্রাচীন। চাকমা, মারমা, ম্রো, মুরুং এমন আরো অনেক আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস এই পার্বত্য অঞ্চলে।

পাহাড়ে গেলে বুঝি মানুষ যত বড়ই হোক প্রকৃতির সামনে সে ক্ষুদ্র- সৈয়দ শামসুল হক

পাহাড় বৃহৎ কিন্তু শান্ত, এবং পাহাড় নিজেই একজন শিক্ষক। পাহাড় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে প্রকৃতিকে শাসন করে কিন্তু শান্তভাবে। এমনই পাহাড়ের কোলে, জন্ম নেওয়া বড় হওয়া এবং শিক্ষা লাভ করা একজন চিত্রশিল্পী খিং সাই মং মারমা। খিং পার্বত্য অঞ্চলের বান্দরবান জেলার মারমা জনগোষ্ঠীর একজন চিত্রশিল্পী। নিজেকে কিছুটা ঋণ শোধ করবার জন্য নাগরিক জীবনের কোলাহলে না এসে, লাল গালিচায় না দাঁড়িয়ে খোদ, নিজের জন্মভূমি বান্দরবানের পাহাড়ের মেহুলী গায়ে মেখে চিত্রপটে পাহাড়কে আরো সুউচ্চ করে দেখাচ্ছে ‘রোয়া দ্ব’ শিরোনামে চিত্র প্রদর্শনীর মধ্যে দিয়ে। খিং সামনে এনেছে তার নিজেকে তার শৈশবকে তার চলার পথকে মারমা সম্প্রদায়কে ফলে সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি শুধু নয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠী তার চিত্রপটে হাজির। শিল্পীর ক্যানভাস সংক্ষিপ্ত এবং সরল, আরোপিত কোনো সুউজ্জ্বল বর্ণের ব্যবহার করা হয়নি, কোনো অতিকায় স্বপ্নের কথা বলা হয়নি, খুবই প্রকৃতি ঘেষা নিজস্ব এবং স্বল্পবর্ণের ভিতর দিয়ে নিজেকে উপস্থাপন করেছে। শিল্পী যেহেতু প্রকৃতি নিবিড় পরিচর্যায় বড় হয়েছে ফলে তার প্রতি দায়ও কম নয়। পাহাড়ি ঝিরির অসামান্য দান পানি এই ঝিরির বন্ধ হওয়া এবং তাদের সংকট চিত্রপটে এসেছে নিবিড়ভাবে। খিং জলরং এবং তেল রঙে বেশ দক্ষ তা তার প্রকৃতি অংকনের ভেতর দিয়ে বলে দেয়। বর্ণ ব্যবহারের ভেতর দিয়ে শিল্পী এক সংক্ষিপ্ততার পরিচয় দেন যা পাহাড়ের স্বভাবসুলভ। মুখচ্ছবি অংকনের ভিতর দিয়ে শিল্পী পাহাড়ের অব্যক্ত কথাগুলো যেন স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছে। মানুষ এবং অন্য প্রাণীরসহ অবস্থান তাও স্পষ্ট খিংয়ের চিত্রপটে।

পাহাড়ের নীরবতাই মানুষের অন্তরের সবচেয়ে বড় শান্তি- সেলিনা হোসেন

পাহাড় বরাবরই শান্ত কিন্তু মানুষ নানাভাবে তাকে অশান্ত করে তোলে তা শিল্পী স্পষ্ট করেছেন তার চিত্রপটে। অস্তিত্ব শিরোনামে খিং এক মুখচ্ছবি চিত্রপটে এনেছেন তা আসলে অস্তিত্বের সংকটকে বেশি ইঙ্গিত করে বলে মনে হয়। খিং তরুণ চিত্রশিল্পী হলেও নিজের বক্তব্য ও বিশ্বাসে স্পষ্ট। শিল্পী পাহাড়ে নিজেদের জীবন সংগ্রামের মতোই নিজের সংস্কৃতির অস্তিত্ব জাতির অস্তিত্ব নিয়ে শংকিত তা তার চিত্র ভাষায় বলে দেয়। তবে শিল্পী সংঘর্ষের পথে মনে হয় বিশ্বাসী নয় নিজের জন্মস্থানে জমিন থেকে বেশ কিছুটা উঁচুতে দাঁড়িয়ে সবাইকে জানান দিচ্ছে সংকট আছে সংঘর্ষ নয়। এখানেই খিংয়ের চিত্রপটের সার্থকতা। মারমা জনগোষ্ঠীর চিত্রকলার ‘রোয়াজ’ হয়ে উঠেছে খিং। শিল্পী পাহাড়ের গায়ে বসে সমতলকে ও ডাকছেন অহিংস শিল্পের ভাষায়। খিংয়ের চিত্রপটে ‘রোয়া দ্ব’ ধরা দেবে আরো সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতরভাবে- এই প্রত্যাশা।

লেখক: চিত্রশিল্পী ও লেখক

ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

Ad for sale 270 x 200 Position (2)
Position (2)