সৈয়দ মোস্তফা হাশমী
, যশোর
যশোরে শুরু হয়েছে পৌষের শীত। প্রকৃতিতে বইছে হিমেল বাতাস। দুপুরে তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও বিকেল থেকে সকাল পর্যন্ত শীতের প্রকোপ বেশ। তাপমাত্রার এমন তারতম্যে সব বয়সের মানুষই শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
এসময় সববয়সের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য। চিকিৎসকরাও শীতে সুস্থ থাকার জন্য সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিচ্ছেন।
তাদের মতে শীতকালে সব বয়সের মানুষই অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় কোল্ড ডায়রিয়া, বয়স্ক ও শিশুদের নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, মওসুমি জ্বর, সর্দি, কাশি ও শরীরে চর্মরোগ দেখা দেয়।
এ সকল রোগ থেকে প্রতিকার পেতে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আম্বিয়া পারভীন সাথী পরামর্শ দিয়ে সুবর্ণভূমিকে বলেন, শীতকালে শিশুদের সুস্থ রাখতে নিয়মিত মায়ের দুধ দিতে হবে। না মোটা না পাতলা- এই প্রকৃতির পোশাক শিশুদের পরাতে হবে। যে সকল শিশু খাবার খেতে পারে তাদেরকে পুষ্টিকর এবং সুষম খাদ্য খাওয়াতে হবে। গলায় মাফলার, গরম পোশাক পরতে হবে। যাতে শীতকালে শিশুদের ঠান্ডা না লাগে। নিয়মিত গোসল করাতে হবে। তবে শিশুদের তেল মাখানোর সঙ্গে সঙ্গে গোসল করানো যাবে না। এমন জায়গায় শিশুদের গোসল করাতে হবে; যেখানে বাতাস থাকবে না। অবশ্যই সুষম গরম পানি দিয়ে গোসল করাতে হবে শিশুদের।
ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) যশোর জেলা শাখার নেতা ও মাগুরা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ফারুক এহতেশাম পরাগ জানিয়েছেন, শীতে সকল বয়সের মানুষের পুষ্টিকর এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্যের মধ্যে রয়েছে, প্রচুর ফল, শাক-সবজি, শস্য, টমেটো, চর্বিহীন প্রোটিন জাতীয় স্বাস্থ্যকর খাওয়া খেতে হবে। এ সকল খাবারে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কারণ এ সকল খাবারে ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি এবং জিঙ্ক সমৃদ্ধ থাকে। তাই শীতে শরীরের কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্য প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
বড়দের ক্ষেত্রে সকালেও সন্ধ্যায় খাবারের সঙ্গে বাড়তি উষ্ণ ভেষজ চা, স্যুপ উষ্ণতা এবং আরাম প্রদান করবে।
এছাড়া শীতে বড় ও ছোটদের ক্ষেত্রে গরম পোশাক, মাফলার মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আবু হায়দার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান সুবর্ণভূমিকে বলেন, ‘‘শীতকালে সন্ধ্যার পর ভারি কাজ কমিয়ে আনতে হবে। রাতের খাবার তাড়াতাড়ি খেয়ে একটু হাঁটাচলা করেই ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে হবে। লেপ বা কম্বলের নিচে শুয়ে বই পড়ুন। পর্যাপ্ত ঘুম শরীরকে সতেজ রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানোর ও ওঠার অভ্যাস করতে হবে। তিনি আরো বলেন, শীতের দিনে সূর্যের আলো কম থাকে। মস্তিষ্কের ‘মেলাটোনিন’ হরমোন ঘুমের চক্র নিয়ন্ত্রণ করে। আলো কমে গেলে শরীরে অলসতা ও বিষণ্নতা বাড়তে পারে। একে ‘সিজনাল ডিপ্রেশন’ বলা হয়। তাই দিনের বেলা ঘরের জানালা-দরজা খুলে রাখতে হবে। সুযোগ পেলে সকালে বা দুপুরে ছাদে অথবা বারান্দায় কিছুক্ষণ সময় কাটাতে হবে। ঘরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া শীতের সকালে কুয়াশা থাকলে ঘরের ভেতরেই ফ্রি-হ্যান্ড ব্যায়াম বা যোগব্যায়াম করতে হবে। স্ট্রেচিং বা আড়মোড়া ভাঙলে পেশির জড়তা কাটে। বিকেলে বা সন্ধ্যায় ব্যাডমিন্টন খেললে শরীর ঘর্মাক্ত ও সচল থাকবে। এতে মানসিক প্রশান্তি বাড়বে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটান। এগুলো মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করবে।”
যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার হুসায়েন শাফায়াত বলেন, গত দুইদিন যশোরে শীতের আগমন ঘটেছে। ফলে ঘরে ঘরে সকল বয়সের মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। প্রাথমিক পর্যায়ে তারা বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। যারা প্রাথমিক পর্যায়ে সুস্থ হচ্ছেন না; তারা একটু শীত কমলেই হাসপাতালমুখী হবেন। বর্তমানে হাসপাতালে শীতজনিত রোগী স্বাভাবিক আছে। এভাবে শীত চলতে থাকলে আগামী ২/৪ দিনে রোগী বাড়তে পারে। শীতজনিত রোগী ব্যবস্থাপত্র দিতে হাসপাতাল প্রস্তুত রয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতিতে চিকিৎসক, সেবিকা ও কর্মচারীরা দায়িত্ব পালন করতে প্রস্তুত আছেন। ওষুধের কিছুটা সংকট থাকলেও শীতকালীন রোগের ওষুধের কোনো কমতি নেই হাসপাতালে।