ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
ঝিনাইদহ ২৫ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি শিশু হাসপাতালের বহিঃ বিভাগ চিকিৎসকের রুমের সামনে শিশুদের কোলে নিয়ে অভিভাবকদের দীর্ঘ লাইন। অধিকাংশ শিশু ঠান্ডা, জ্বর, কাশি কিংবা অন্য কোন রোগে আক্রান্ত। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সাথে সাথে শিশু রোগীদের ভীড় বাড়ছে। বিশেষ করে রাতে শীতের তীব্রতা বেশি আর দিনে কম ও কিছুটা গরম অনভূত হওয়ায় শিশুদের অসুস্থতা বাড়ছে এমনটাই বলছেন চিকিৎসকরা। এক্ষেত্রে তারা শিশুদের সুস্থ রাখতে অভিভাবকদের সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
ঠান্ডা, কাশি আর জ্বরে আক্রান্ত ১৬ মাসের শিশু মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ কে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন সদর উপজেলার রাধাকান্তপুর গ্রামের গৃহবধূ মুন্নী বেগম। তিনি বলেন, গত ১০ দিন আগে ছেলেটা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। খুব কাশি হচ্ছিল। এরপর তিনদিন আগে হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। এখন সুস্থ হয়ে উঠেছে।
শহরের আদর্শপাড়া এলাকার বাসিন্দা শান্তা আহমেদ সুমি বলেন, আমার সন্তান মুনতারিন রহমান। ওর বয়স ১৫ মাস। ওর ঠান্ডা লেগেছে আর কাশি দিলে বুকের ভিতরে জোরে জোরে শব্দ হচ্ছে। পাঁচ দিন ধরে এমন সমস্যা। তাই ডাক্তার দেখাতে শিশু হাসপাতালে এসেছি।
হাসপাতালে সেবা নিতে আসা দুই শিশুর মা সুমাইয়া আক্তার লিমা বলেন, প্রথমে মেয়েটার জ্বর আসে। এর কয়েকদিন পর ছেলেটার ঠান্ডা লাগে। ফলে দুই সন্তানকে নিয়েই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। সাতদিন ভর্তি থাকার পর সন্তানদের নিয়ে বাড়ি ফিরি। এখন আবার ডাক্তার দেখাতে এসেছি।
বাংলাদেশের একমাত্র বিশেষায়িত সরকারি ঝিনাইদহ শিশু হাসপাতালে শয্যা রয়েছে মাত্র ২৫ টি। কিন্তু বাড়তি চাপ সামলাতে ৫৫ থেকে ৬০ জন কখনও আরো বেশি শিশু ভর্তি থাকছে। বাকিদের বহিঃবিভাগের মাধ্যমে সেবা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে হাসপাতালটিতে ভর্তি রয়েছে ৫৬ শিশু। গত এক সপ্তাহে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৯০ জন। গত এক সপ্তাহে বহিঃবিভাগের মাধ্যমে সেবা নিয়েছে দুই হাজার ৮৫ জন শিশু।
তবে বহিঃবিভাগ এবং অন্তঃবিভাগে সেবা নেওয়া ৪৫ ভাগ শিশু ব্রংকিউলাইটিস বা কমন রেসপিরেটরি সিনসাইটিয়াল ভাইরাসে (নিউমোনিয়ার একটি প্রকার) রোগে আক্রান্ত এবং প্রায় ৩০ ভাগ শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। আবহাওয়ার তারতম্যই এর অন্যতম কারণ বলেন চিকিৎসকরা।
ঝিনাইদহ ২৫ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি শিশু হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক ডা. আলী হাসান ফরিদ জামিল বলেন, ভর্তি শিশুরা ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠছে। শিশুদের শারীরিক অবস্থা খুব বেশি খারাপ হচ্ছে না। তবে বাচ্চা ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া, বুক ভিতরের দিকে বসে যাওয়া, খাওয়া কমে যাওয়া’র মত লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বিশেষ করে শিশুদের সুস্থ রাখতে অভিভাবকদের সচেতন থাকা সবথেকে বেশি জরুরি।