মাদক সংক্রান্ত বিরোধে খুলনায় এনসিপি নেতাকে হত্যার চেষ্টা বলেছে র্যাব
খুলনা অফিস
খুলনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির বিভাগীয় আহ্বায়ক মোতালেব শিকদার হত্যাচেষ্টা মামলার মোটিভ উদ্ঘাটনের দাবি করেছে র্যাব। মাদক সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরেই মোতালেবকে গুলি করে শামীম সরদার ওরফে ডিকে শামীম ওরফে ঢাকাইয়া শামীম।
‘ঘটনায় জড়িত’ ডিকে শামীম, আরিফ ও মাহাদিকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার বিকেলে প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন র্যাব-৬ এর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর নাজমুল ইসলাম।
লবণচরায় র্যাব-৬ এর সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মাদক সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ক্ষিপ্ত হয়ে শামীম নিজে মোতালেব সরদারকে গুলি করেন। এ ঘটনায় ২৫ ডিসেম্বর মোতালেবের সহযোগী আরিফকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
পরে শুক্রবার দিবাগত রাতে নগরীর বসুপাড়া থেকে হত্যাচেষ্টার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী শামীম সরদার ওরফে ডিকে শামীম, যিনি ঢাকাইয়া শামীম নামে পরিচিত, তাকে ও তার সহযোগী মাহাদিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ সময় তাদের কাছে থেকে দশটি মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা জব্দ করা হয়। ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে মেজর নাজমুল ইসলাম বলেন, সোনাডাঙ্গা আল আকসা মসজিদ রোডে তন্বীর ভাড়া বাড়িতে মাদকের কারবার চলতো। মোতালেবের পরিচিত অনেকেই ওই বাড়িতে নিয়মিত ইয়াবা সেবন করতেন।
ঘটনার দিন (২২ ডিসেম্বর) তন্বী, মোতালেব সিকদার, আরিফ, ইফতি, তন্বীর স্বামী তানভীর, তন্বীর বন্ধু ইমরান ও ইফতির চাচাতো ভাই ওই বাড়িতে অবস্থান করছিলেন।
সকাল ৭টার দিকে স্থানীয় সন্ত্রাসী শামীমসহ ৪/৫ জন তন্বীর বাসায় যান। সেখানে পৌঁছে শামীম জানান, মোতালেব একটি ইয়াবার বড় চালান এনেছে। এ তথ্য তারা নিশ্চিত হয়ে সেখানে গেছেন। চালানের মাদকগুলো শামীমকে দিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। মোতালেব অস্বীকার করলে তারা ঘরের মধ্যে তল্লাশি চালান।
কিন্তু মাদকের চালান খুঁজে না পাওয়ায় তারা মোতালেবকে মারধর করেন। এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে গুলি করেন। এরপর তারা দ্রুত সেখান থেকে সরে যান।
তিনি আরও বলেন, শামীম ওরফে ঢাকাইয়া শামীম খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকার অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে দস্যুতা, বিশেষ ক্ষমতা আইন, মাদক মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
সংগঠিত এ হত্যাচেষ্টাটি মূলত খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকায় মাদক ব্যবসা ও মাদকের টাকা ভাগাভাগিকেন্দ্রিক। এ ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদের গ্রেপ্তার ও মূল রহস্য উন্মোচনে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
গত ২২ ডিসেম্বর সকালে নগরীর সোনাডাঙ্গা মজিদ সরণির আল আসকা মসজিদ গলির ‘মুক্তা হাউজ’ নামক বাসার নিচতলায় গুলিবিদ্ধ হন মোতালেব শিকদার। পুলিশ সেখান থেকে গুলির খোসা, বিদেশি মদের বোতল, ইয়াবা সেবনের সরঞ্জাম ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের আলামত জব্দ করে।
ঘটনাটি সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ২৩ ডিসেম্বর দুপুরে আহত মোতালেবের স্ত্রী রহিমা আক্তার ফাহিমা জেলা জাতীয় যুবশক্তির যুগ্ম সদস্য সচিব তনিমা ওরফে তন্বীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৬/৭ জনকে আসামি করে সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
গোয়েন্দা পুলিশ তানিয়া তন্বীকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে তিনি কারগারে রয়েছেন। মামলাটি পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার ডিকে শামীম নগরীর গোবরচাকা এলাকার বাসিন্দা শামসুল হকের পুত্র। শামীমের সহযোগী মাহাদিন একই এলাকার মৃত শেখ ইব্রাহিমের ছেলে।