বিশেষ প্রতিনিধি
, যশোর
যশোরের দুটি আসনে বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী বদল হচ্ছে- এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। এই খবরে বদলে যেতে শুরু করেছে এলাকা দুটির নির্বাচনি হালচাল। প্রাথমিকভাবে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া দুই আসনের দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে, আশাবাদী হয়ে উঠা দুই সম্ভাব্য প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা চাঙা হয়ে উঠেছেন। বিষয়টি নিষ্পত্তির পর্যায়ে না গেলেও নেতা ও তাদের কর্মীরা বুঝতে পারছেন না, আসলে কোন তথ্য ঠিক, কোনটা গুজব।
গত ১৭ ডিসেম্বর গুলশানে দলীয় চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করে বিএনপি। সেখানে তিন বিভাগের মোট ১০৭ জন সম্ভাব্য প্রার্থীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এর মধ্যে যশোর-১ (শার্শা) ও যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের ঘোষিত দুই প্রার্থী যথাক্রমে কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ ও মফিকুল হাসান তৃপ্তিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অথচ এর আগে যশোরের ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে বিএনপি যে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে, তার মধ্যে ওই দুইজনও ছিলেন।
তারেক রহমানের মতবিনিময় সভায় ঘোষিত দুই প্রার্থীকে আমন্ত্রণ না জানানোয় যশোরে জোর আলোচনা-গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। সভায় ডাক না পাওয়া দুই প্রার্থীও ছুটে যান ঢাকায়। বসে থাকেননি দলীয় অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীরাও। তারাও দ্রুতই ঢাকার পথ ধরেন।
এই বিষয়গুলো অবগত থাকা দলীয় সূত্র বলছে, যশোরের এই দুটি আসনে দলীয় প্রার্থী বদল হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের বদলে আবুল হোসেন আজাদ এবং মফিকুল হাসান তৃপ্তির বদলে নুরুজ্জামান লিটনের সম্ভাবনা রয়েছে।
কাজী শ্রাবণ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও আসন্ন নির্বাচনে বিএনপিঘোষিত প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী। আবুল হোসেন আজাদ যশোর-৬ আসনে একাধিকবার বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন। কিন্তু আওয়ামী জমানায় ভোটের নামে প্রহসন হওয়ায় তিনি সুবিধা করতে পারেননি।
মফিকুল হাসান তৃপ্তি বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক। ওয়ান-ইলেভেনের সময় ‘সংস্কারবাদী’ আখ্যা পাওয়া সত্ত্বেও ২০১৮ সালের নির্বাচনে তার ওপরই ভরসা রাখে দল। যদিও ‘রাতের ভোট’ হিসেবে কুখ্যাতি পাওয়া ওই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ আফিল উদ্দিনের সন্ত্রাসী বাহিনী তৃপ্তিকে মাঠেই দাঁড়াতে দেয়নি।
নুরুজ্জামান লিটন শার্শা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। তরুণ এই নেতা এর আগে জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
প্রার্থিতা বদলের সম্ভাবনার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সংশ্লিষ্ট নেতারা মুখ খুলতে চাননি। আবুল হোসেন আজাদ বলেন, ‘২ নভেম্বর পর্যন্ত আমি প্রার্থী ছিলাম। ৩ নভেম্বর থেকে আমি প্রার্থী নেই। এখন এই আসনে প্রার্থী বদল হবে কি-না আমার জানা নেই। লোকে অনেক কথা বলছে। এসব কথার সত্যাসত্য আমার জানা নেই।’
মফিকুল হাসান তৃপ্তি বলেন, ‘আমাকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও দলের কোনো কোনো নেতা নিজেকে প্রার্থী হিসেবে বলে বেড়াচ্ছেন। কীসের ভিত্তিতে তারা এই দাবি করছেন তা আমার জানা নেই। আমি আমার কাজ করছি। একটু আগে (মঙ্গলবার দুপুর) তারেক রহমানের দেশে আগমনকে স্বাগত জানিয়ে বেনাপোলে সমাবেশ ও মিছিল করলাম।’
নুরুজ্জামান লিটন বলেন, ‘বাজারে অনেক কথাবার্তা রয়েছে। কোনটা সত্য, কোনটা মিথ্যা আমার জানা নেই। আমি দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েছি। বাদবাকিটা নীতিনির্ধারকদের ব্যাপার।’
দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপি সব আসনে বিকল্প প্রার্থী রেখেছে। প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণা হলেও প্রয়োজনে যেকোনো আসনে প্রার্থী বদল করা হতে পারে। সম্ভাব্য সেই বদলের তালিকায় যশোরের দুটি আসনের প্রার্থীরা থাকতে পারেন। ইতিমধ্যে পানি অনেক দূর গড়িয়েছে বলেও তারা আভাস দিয়েছেন।
প্রার্থী বদলের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ার পর নির্বাচনি এলাকা দুটিতে হাওয়া বদলে যাচ্ছে। কেশবপুরে কাজী শ্রাবণের অনুসারীরা মুষড়ে পড়েছেন। তারা ভোটের মাঠ থেকে এক প্রকার উঠে গেছেন। আর চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন আবুল হোসেন আজাদের অনুসারীরা। তারা অপেক্ষায় আছেন, প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন নিয়ে এলাকায় ফিরলে নির্বাচনি কার্যক্রম শুরু করবেন। ইতিমধ্যে আবুল হোসেন আজাদ দলীয় মনোনয়নপত্র কিনেছেন বলে তার অনুসারীরা দাবি করলেও আজাদ তা অস্বীকার করেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যশোর-১ (শার্শা) আসনে প্রাথমিকভাবে ঘোষিত প্রার্থী মফিকুল হাসান তৃপ্তি ‘পরিস্থিতি প্রতিকূলে চলে যাচ্ছে’ বিবেচনায় ১৭ ডিসেম্বরের পরই ঢাকা চলে যান। ফিরে এসে তিনি ফের নির্বাচনি মাঠে নেমেছেন। দলে তার প্রতিদ্বন্দ্বী নুরুজ্জামান লিটন ও আবুল হাসান জহিরের অনুসারীরা এখন পর্যন্ত তৃপ্তির নির্বাচনি কাজে সহায়তা করেননি। উল্টো তারা প্রার্থিতা বদলের দাবিতে কাফনের কাপড় পরে মহাসড়কে অবস্থান নেন। এই সব কর্মী এখন প্রার্থী বদলের গুঞ্জন শুনে চাঙা হয়ে উঠেছেন। তারা তাদের ভাষায় সুসংবাদের অপেক্ষায় আছেন।
খোঁজ-খবর রাখেন- এমন একাধিক ব্যক্তি জানান, শার্শার রাজনীতিতে হাসান জহিরের ভালো অবস্থান থাকলেও দলের উচ্চপর্যায়ে তার যোগাযোগ সীমিত। সেই কারণে এই আসনে প্রার্থিতা বদল হলেও তাতে ভাগ্যের শিকে ছিড়বে না হাসানের। তুলনায় অল্পবয়সী হলেও উচ্চমহলে লিটনের যোগাযোগ অনেক বেশি।
আলোচ্য দুটি আসনেই বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতে ইসলামী। যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক মো. মুক্তার আলী। আর যশোর-১ (শার্শা) আসনে দলটি মনোনয়ন দিয়েছে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আজীজুর রহমানকে। দলীয় নেতাকর্মীরা তাদের প্রার্থীকে নিয়ে প্রথম থেকেই মাঠে আছেন। জামায়াতের তৃণমূলের কর্মীরা মনে করছেন, মনোনয়ন নিয়ে প্রতিপক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিভাজন তাদের প্রার্থীর জয়ের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে। যদিও দলটির নেতারা বলছেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কে হলেন না হলেন, তা নিয়ে তারা ভাবছেন না।