রম্য
আহসান কবির
রাজনীতি কী?
উত্তর-ক্ষমতায় যাবার কুটিল উপায়! আর ক্ষমতায় যাবার পর রাজনীতি হচ্ছে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার নির্মম কৌশল প্রয়োগ!
প্রশ্ন এবং উত্তর আমার প্রিয় বিষয়। এটা অবশ্য অবিভক্ত রাশিয়ার কৌতুক সমগ্র থেকে পাওয়া। যেমন-
কমিউনিজম কী?
উত্তর: পুঁজিবাদে পৌঁছাবার দীর্ঘতম পথ।
ঠিক তেমনি বলা যায়-
জাতীয় পার্টি কী?
উত্তর: ক্রমশ বিএনপি, জামায়াত ও আওয়ামী লীগে বিলীন হবার দীর্ঘতম প্রক্রিয়া!
এছাড়াও স্কুল-কলেজজীবনে উত্তর শিখতে হতো শিক্ষক বা বাবার পিটুনি থেকে বাঁচার জন্য। আর তাই এখনকার জনপ্রিয় প্রশ্নগুলো হচ্ছে এমন-
প্রশ্ন: এখন কীসের হাত থেকে বাঁচার জন্য উত্তর খুঁজছেন?
উত্তর-মব জাস্টিসের হাত থেকে বাঁচার জন্য। ধরুন আমাকে জেলে নেওয়া হবে। আমি নিরাপদে সেখানে যেতে চাইবো। যাবার আগে কেউ গায়ে হাত তুলবে না বা জুতার মালা পরাবে না অথবা পচা ডিম ছুঁড়ে মারবে না।
প্রশ্ন: অন্তর্বর্তীর বর্তমান অবস্থা কেমন?
উত্তর: খাবার আগে স্যান্ডউইচ বা বার্গারের অন্তর্বর্তীর (কিমা) যে অবস্থা!
প্রশ্ন: প্রশ্ন করার সবচাইতে খারাপ দিক কী?
উত্তর: চাকরি হারানোর ভয়! (দয়া করে এর সাথে কোনো উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করা ও কারো চাকরি হারানোর ঘটনা মেলাবেন না)
প্রশ্ন: অন্তর্বর্তীর সবচেয়ে ভালো দিক কী?
উত্তর: আগে আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যতটা স্বাধীন ছিলাম তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি স্বাধীনতা পেয়েছি!
প্রশ্ন: কী যা তা উত্তর দিচ্ছেন? পত্রপত্রিকা বা টেলিভিশন কি আগের চেয়ে বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছে না?
উত্তর: এটা নিয়ে গর্ব কইরেন না। জনকণ্ঠ, একাত্তর বা সময় টেলিভিশনের কথা সামনে চলে আসবে! মত প্রকাশের অধিকার সবার প্রাপ্য ছিল। পরে কিন্তু বলা হবে শুধু সবজির দাম কম ছিল!
প্রশ্ন: অন্তর্বর্তী সরকারের অন্তত দুইটা জনকল্যাণমূলক কাজ কী?
উত্তর: ৫ আগস্ট দিনটাকে ছুটি ঘোষণা করা। ১৫ তারিখ না থাকুক, পাঁচ তারিখ তো ছুটি আছে! আর ১৭ বছর যে স্বৈরাচারকে নিয়ে কথা বলতে পারেননি বা সাহস ছিল না, তাদের ইচ্ছে মতো সমালোচনা করতে পারছেন।
প্রশ্ন: অন্তর্বর্তীর সবচেয়ে ভালো দুটি কাজ কী?
উত্তর: ড. মাহফুজ এখন আর গান গাচ্ছেন না! হিরো আলমও এখন গান কম গাচ্ছেন, নাটক-সিনেমা কম করছেন। আর এই আমলে স্লোগান নতুন মাত্রা পেয়েছে। যেমন- জামায়াত শিবির পাকিস্তানি/তুমিও জানো আমিও জানি!
প্রশ্ন: এনসিপি কি কিংস পার্টি?
উত্তর: ধুর মিঞা। আপনি দেখি টিআইবির দালাল! এনসিপি হচ্ছে সম্ভাবনাহীন দেশে সম্ভাবনাময় একটা শিশুদের দল!
প্রশ্ন: ড. ইউনূস কি নিরপেক্ষ?
উত্তর: ভাই সেই ডায়ালগটা মনে নেই? ‘পাগল ও শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়’! ড. ইউনূস পাগলও নন, শিশুও নন। আগে মনে করা হতো তিনি এনসিপি জামায়াত বা ইসলামনির্ভর দলগুলোকে ভালোবাসেন। নির্বাচনের ঘোষণা দেবার পর তিনি নাকি বিএনপি বলয়ে প্রবেশ করতে পেরেছেন!
প্রশ্ন: আসল রাজাকার কারা?
উত্তর: যারা জামায়াতকে চিনতে পারেনি, আসল রাজাকার তারাই!
প্রশ্ন: নিতম্ব প্রদেশ ও বাঙালির মধ্যে মিল কোথায়?
উত্তর: আমরা জানি শরীরের সব দেশ। যেমন- ওষ্ঠদেশ, পৃষ্ঠদেশ, বক্ষদেশ। নিতম্ব দুইভাগে বিভক্ত বলিয়া উহা প্রদেশ। বাঙালি শুরু থেকেই দুই ভাগে বিভক্ত না হইয়া থাকিতে পারে না। যেমন কবিতায় রবীন্দ্রনাথ-নজরুল। গানেও তাই। ফুটবলে আবাহনী-মোহামেডান। রাজনীতিতে বিএনপি-আওয়ামী লীগ। বিদেশগতভাবে আমেরিকা-রাশিয়া। চেতনায় মুক্তিযোদ্ধা-রাজাকার। দালালির ক্ষেত্রেও তাই। কেউ ভারতের আর কেউ কেউ নাকি পাকিস্তানের দালাল।
প্রশ্ন: কোন প্রশ্নের উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি?
উত্তর: নির্বাচন হবে কি হবে না!
তাহলে কী আর করা? কিছুই করার না থাকলে নতুন প্রশ্ন নিয়ে ভাবেন। উত্তর না মিললেও কোনো অসুবিধা নাই। কেউ না কেউ কোনো না কোনোদিন এইসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন। যেমন-
প্রশ্ন: নির্বাচন না হলে কী হবে?
উত্তর: একমাত্র আল্লাহ জানেন।
প্রশ্ন: ২০০৭-২০০৮ সালের আলোচিত বিষয় ছিল ‘মাইনাস টু’। এখন?
উত্তর: ‘মাইনাস ফোর, মাইনাস ফোর’ যারা বলে তারা দেশের শত্রু!
প্রশ্ন: রাজনীতি আর বাসের বন্ধুত্ব কেমন?
উত্তর: বাসের ড্রাইভার বা কন্ডাক্টরের সাথে বন্ধুত্ব যতক্ষণ বাসে থাকবেন ততক্ষণ। রাজনীতিতে বিরোধী দলে থাকলে বন্ধুত্ব একরকম। ক্ষমতায় যাবার জন্য এখানে ল্যাংমারা থেকে শুরু করে খুনোখুনি পর্যন্ত বৈধ!
প্রশ্ন: ইনডেমিনিটির সংজ্ঞা কী?
উত্তর: যাদের আপনি খুন করেছেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার করা হবে। আর যারা আমার হাতে খুন হয়েছে তারা কবরে রেস্ট নিতে থাকবে!
প্রশ্নের আসলে শেষ নেই। বিভিন্ন ঘটনায় প্রশ্নের জন্ম হয়। এই লেখা যদি কোনো প্রশ্নের জন্ম দেয় তাহলে সম্পাদক কোনোক্রমেই দায়ী হবেন না।
দয়া করে লেখকের নাম দেখে বিভ্রান্ত হবেন না!
লেখক: সাংবাদিক, রম্যলেখক, অভিনেতা