স্বাস্থ্য
আলাউদ্দিন আল মামুন
পেশাজীবী হিসেবে একজন চিকিৎসক ও একজন সাংবাদিকের কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ মিল আছে। কর্মে যেমন জনগণ থেকে সমগ্র জাতিকে রক্ষা করতে পারে তেমনি কাণ্ডে দায়িত্ববোধ না থাকলে জীবননাশের মতো বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। রুগীর সাথে মশকরা করা কিছুটা অপেশাদারত্ব, তাই কিছুটা আশকারা দিয়েই একজন চিকিৎসক হিসেবে বলি, আমাদের দেশের রুগী ডাক্তার দেখানোর পর ফার্মেসি থেকে জানতে চায়- মেডিসিন ঠিক আছে কি না, ওষুধ খাবে কি না শোনে প্রতিবেশীর কাছে, আর চিকিৎসা ঠিক না ভুল- সেটা ঠিক করেন সাংবাদিকরা।
এটা আমার হাইপোথিসিস নয়, হালকা মশকরা। একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান ভিত্তি হলো শিক্ষা আর স্বাস্থ্যব্যবস্থা।
মানুষের সুস্বাস্থ্য কেবল ব্যক্তিগত সম্পদ নয়- এটি জাতীয় উৎপাদনশীলতা, অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতার মূল চালিকাশক্তি। শক্তিশালী স্বাস্থ্যসেবা পারে সুস্থ জাতি গড়তে। আর এই অগ্রগতির পথকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক রাখতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আধুনিক সংবাদমাধ্যম।
আজকের যুগে স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত তথ্য মানুষের জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলে। সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে, জনসচেতনতা তৈরি করে এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা বাড়ায়। আধুনিক সাংবাদিকতা তাই শুধু খবর পরিবেশনের মাধ্যম নয়, কার্যত এটি এক ধরনের জনগণের স্বাস্থ্য-শিক্ষা। বিশেষ করে মহামারি, দুর্যোগ বা জনস্বাস্থ্য সংকটের সময় নির্ভরযোগ্য সংবাদই ভুল ধারণা, গুজব ও আতঙ্ক ঠেকাতে পারে, জাতিকে রক্ষা করতে পারে। তার প্রমাণ আমরা দেখেছি, বিগত দিনে কোভিড মহামারির সময়।
জনসচেতনতা বৃদ্ধি, সঠিক চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা, অপ্রতুলতা ও সংকট, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার ভূমিকা তুলে ধরে দেশের সমস্ত চিকিৎসকের সাথে এক কাতারে কাজ করেছে সংবাদ মাধ্যমগুলো।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের কারণে তথ্য এখন মানুষের হাতে দ্রুত পৌঁছায়। কিন্তু এই গতি যত সহজ হয়েছে, ভুয়া তথ্যের ঝুঁকিও তত বেড়েছে। তাই স্বাস্থ্য-বিষয়ক প্রতিবেদনে সাংবাদিকদের দায়িত্ব আরও বাড়ছে। তথ্য যাচাই, বিশেষজ্ঞ মতামত গ্রহণ এবং বৈজ্ঞানিক ভিত্তির ওপর সংবাদ তৈরিÑএসবই একটি সুস্থ সমাজ গঠনের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। স্বাস্থ্যকর্মী ও সংবাদকর্মীর সম্পর্ক গাণিতিকভাবে সম্পূরক না হয়ে পরিপূরক হওয়াই বাঞ্ছনীয়। তাহলে দুই পেশাজীবীদের কর্ম ও কাণ্ডে গতিশীলতা আসবে। দুর্নীতি, ভুল চিকিৎসা, স্বাস্থ্য ন্যায্যতা ও সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে রিপোর্টিং যেমন জবাদিহিতার পরিবর্তন আনে তেমনি তথ্য-গবেষণাভিত্তিক ও জবাবদিহিতামূলক রিপোর্টিং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে কল্যাণমুখী করে।
বাংলাদেশ আর সুবর্ণভূমির পুনঃযাত্রায় আশা করি স্বাস্থ্য-সচেতনতা বৃদ্ধি, জনগণের সঠিক তথ্যপ্রাপ্তি এবং মানবকল্যাণে নিবেদিত সাংবাদিকতার ধারাকে এগিয়ে নিতে এই প্রচেষ্টা একটি শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে।
লেখক: চিকিৎসক