যশোর, বাংলাদেশ || রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫
Subornovumi Subornovumi Subornovumi Subornovumi Subornovumi Subornovumi
Ad for sale 870 x 80 Position (1)
Position (1)
Ad for sale 870 x 100 Position (1)
Position (1)

জীবনাচার

চলার পথের অভিজ্ঞতা

ফিরোজা বুলবুল কলি

প্রকাশ : শনিবার, ৬ ডিসেম্বর,২০২৫, ১১:২৪ পিএম
চলার পথের অভিজ্ঞতা

কখনো একটা দুর্ঘটনা, একটা মুহূর্ত সবকিছু থামিয়ে দেয়। তখন আমরা বুঝতে পারি জীবন কতো ঠুনকো, কতো ভঙ্গুর, মৃত্যু খু-উ-ব কাছে। তারপরও জীবন বহমান। এই জীবনে আমাদের অনেক প্রাপ্তি আছে, আছে না পাওয়ার বেদনা। আমাদের জীবনের চলার পথ সব সময় মসৃণ হয় না। কিন্তু কিছু প্রাপ্তি এই অমসৃণ পথগুলোকে মসৃণ করে তোলে, চলার পথের কাঁটাগুলো ফুলে রূপান্তর করে, আমাদের বেঁচে থাকাকে অর্থবহ করে তোলে। সেরকম কিছু কথা শেয়ার করতে চাই।

দীর্ঘদিন শিক্ষকতার সাথে জড়িত, মফিদুল নামে আমার এক ছাত্র- যে আমার কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করে বর্তমানে বিডিআরে কর্মরত। সে খুব ভালো গান করতো। বিশেষ করে ওর গলায় ‘এ মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে লক্ষ মুক্তিসেনা’ এই গানটি আমি খুব পছন্দ করতাম। কলেজ থেকে চলে যাওয়ার পর হঠাৎ দেখি আমার মোবাইলে ৫০ টাকার লোড হয়েছে। আমি বুঝতে পারছিলাম না, কীভাবে এলো। আর তখনই মফিদুল ফোন করলো। বললো, ‘ম্যাডাম আমি চাকরি পেয়েছি। বেতনের টাকা থেকে আপনার মোবাইলে ফ্লেক্সিলোড দিলাম। কিছু মনে করবেন না। আমাকে সন্তান হিসেবে সানন্দে গ্রহণ করবেন।’ এই মুহূর্তের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারবো না।

অনার্সের ছাত্র কুমারেশ মজুমদার রেজাল্ট পাওয়ার পর ফোন দিয়ে জানালো, সে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছে। একদিন কলেজে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসবে। আসলো এবং আমাকে একটা প্যাকেট দিলো। খুলে দেখি তাতে আয়াতুল কুরসি অর্থসহ লিখে বাঁধাই করা। বললো, ‘আপনার জন্য নিয়ে এসেছি। আমার পক্ষ থেকে একটা ছোট্ট উপহার। পরম প্রশান্তিতে ও গর্বে বুকটা ভরে গেল। এর থেকে ভালো উপহার কী হতে পারে ছাত্রের কাছ থেকে!’

আমাদের বাসার কাছে আদিবাসী নিম্নবর্ণের হিন্দু ধর্মালম্বীদের বসবাস। ছোটবেলায় দেখতাম তারা মাটির ঘট বানিয়ে পূজা করতো। এদের কোনো মন্দির ছিল না। আমার মায়ের সাথে তাদের খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। ওদের সুখে-দুখে সবসময় আমার মা তাদের পাশে থাকতেন। পূজার সময় তারা ধর্মতলা থেকে কাগজের ঠোঙায় আমার মায়ের জন্য গজা নিয়ে আসতো। ২০০৪ সালে জননেতা তরিকুল ইসলামের প্রচেষ্টায় ওদের ওখানে বড় মন্দির স্থাপিত হয়। যথারীতি তরিকুল ইসলাম পূজার সময় সেই মন্দিরে অর্থ বরাদ্দ করেন। সেবারই প্রথম ওই মন্দিরে সাড়ম্বরে পূজা উদযাপন হয়। ওই বছরই রোজা ও পূজা একইসাথে চলছিল। ওই পূজায় আমাকে ওরা নিমন্ত্রণ করেছিল। পুজোর ক’দিন ইফতারের পর একবার করে ওদের এখানে ঘুরে আসতাম। যে বিষয়টি আমাকে বিস্মিত ও আনন্দিত করেছিল সেটি হলো, তারা মাগরিবের সময়, তারাবিহর সময় ঢাক-ঢোল বাজানো বন্ধ রাখতো। কী পারস্পরিক সম্মানবোধ! দশমীর দিন ধুনুচি নাচের প্রতিযোগিতায় আমাকে বিচারক করে নিয়ে গেছিল। প্রতিযোগিতা শেষ হলো। পুরস্কার প্রদান করলাম। তখনও অনেক বিস্ময় আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। মাইকে ঘোষণা হলো, এবার প্রধান অতিথিকে উপহার দেয়া হবে। ওরা যথারীতি আমার হাতে উপহার তুলে দিলো। অনুষ্ঠান শেষে বাসায় ফিরে প্যাকেট খুলে দেখি একটি জায়নামাজ। বাকরুদ্ধ আমি। চোখে পানি এসে গেল। এইতো আমার দেশ, আমার বাংলাদেশ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। যে দেশে সাড়ম্বরে একইসাথে রোজা ও পূজা উদযাপন হয় পারস্পরিক সম্প্রীতির মাধ্যমে।

লেখক: কলেজশিক্ষক, সমাজকর্মী

ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

Ad for sale 270 x 200 Position (2)
Position (2)