যশোর, বাংলাদেশ || রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫
Subornovumi Subornovumi Subornovumi Subornovumi Subornovumi Subornovumi
Ad for sale 870 x 80 Position (1)
Position (1)
Ad for sale 870 x 100 Position (1)
Position (1)

সমসাময়িক

বাংলা : ইতিহাসের বড় অংশ জুড়ে শুধু ব্যর্থতা

বেনজীন খান

প্রকাশ : শনিবার, ৬ ডিসেম্বর,২০২৫, ০৩:৩৩ পিএম
বাংলা : ইতিহাসের বড় অংশ জুড়ে শুধু ব্যর্থতা

ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় বাংলার প্রকৃতি, জলবায়ু, ভূমি গঠন ও খাদ্যাভ্যাস এখানকার মানুষকে দিয়েছে এক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্যের যেমন আছে অসংখ্য ভালো দিক, তেমনি অগণিত খারাপ দিক। বাংলার ভালোর দিক, উদারতার দিক, বীরত্বগাথা চর্চিত হওয়া এখানকার ইতিহাসের প্রধান গতিমুখ। এখানে খুব কম চর্চা হয়েছে আত্মসমালোচনা ও ব্যর্থতার আদ্যপান্ত অনুসন্ধান। বলা চলে, এটাও এখানকার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের প্রধান প্রবণতা।

আত্মকেন্দ্রিক, ঠুনকো স্বার্থে বিভোর জনগোষ্ঠী বারবার বৃহৎ স্বার্থ উপেক্ষা করে নিজেকে দীর্ঘমেয়াদি বিপদের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। প্রাচুর্যে ভরপুর এই ভূমি তার পুত্রদের কখনো যূথবদ্ধ হতে দেয়নি। তথাকথিত ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধ তাদের ঘাড়ের উপরে ভূতের আছর হয়ে আছে অনন্তকাল ধরে। যতদিন এই জাতিগোষ্ঠী সেই ভূতকে ঘাড় থেকে নামাতে না পারছে ততদিন তারা থাকবে ছিন্নভিন্ন, বহুধা বিভক্ত, শক্তিহীন, ভঙ্গুর। ইতিহাসে এই সুযোগটাই পুনঃ পুনঃ গ্রহণ করেছে বহিরাগত শক্তি- আর্য, সেন, আরব, আফগান, তুর্কি, পর্তুগিজ, ফরাসি অথবা ব্রিটিশ- সকলেই। এ জাতি কখনো বুঝেই উঠতে পারেনি এরা লুণ্ঠনকারী, ডাকাত, দখলদার ঔপনিবেশিক শক্তি।

তথাকথিত ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যের রোগে আক্রান্ত আর আত্মকলহে লিপ্ত জনগোষ্ঠী বিরতিহীন বন্ধু ভেবে আলিঙ্গন করেছে ডাকাত খুনি লুণ্ঠনকারীর বুক। সত্যিকার অর্থে আমাদের ইতিহাস বলে যদি কিছু থেকে থাকে সেটি হলো বারবার বহির্শক্তি দ্বারা শাসিত হওয়ার ইতিহাস।

দীর্ঘকালীনতার কারণে প্রাচীনকাল বড় বেশি ধোঁয়াশাচ্ছন্ন মনে হলেও আমাদের আধুনিককাল রক্তাক্ত রগরগে সত্য।

১৭৫৭ সালে এ জাতি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছিল তার শাসকের নির্মম পরাজয়। সে তার মাতৃভূমিকে বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দিয়ে ১৯০ বছরের জন্য নিজেকে করেছিল উপনিবেশিত। অথচ নীরব দর্শক এই বাঙালি জাতি সেদিন যদি একটি করে ঢিলও ছুড়তো তাহলেও শত্রু পাহাড়সমান উঁচু কবরের নিচে চাপা পড়তো।

পরাধীনতার ১০০ বছর পর
১৮৫৭ সালে সংঘটিত রক্তক্ষয়ী যুদ্ধকে এ জাতি ভারতের প্রথম ‘স্বাধীনতার সংগ্রাম’ আখ্যা দিতেও ব্যর্থ হয়েছিল। তারা গ্রহণ করেছিল ব্রিটিশের দেওয়া বয়ান ‘সিপাহি যুদ্ধ’র তকমা।

১৯৪৭ সালে এ জাতি পুনর্বার ‘স্বাধীন বাংলা’ অর্জন করতে পারতো। আফসোস, সেখানেও তারা ব্যর্থ হয়েছিল।

১৯৭১ সালে নয় মাস সশস্ত্র রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রান্তে এসে ৩ ডিসেম্বরেই সে বিপ্লবকে হাতছাড়া করে। ‘মুক্তিযুদ্ধ’ নাম বদলে বনে যায় ‘ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ’। ১৩ দিনের মাথায় এ জাতি পুনরায় খপ্পরে পড়েছিল ‘হিন্দুত্ববাদী’ রাজনীতির বেড়াজালে।

১৯৭৫-এ বেড়া ভেঙে সে বের হতে চাইলেও যথারীতি ব্যর্থ হয়।

১৯৯০ সালে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির শিখণ্ডী শাসকের পতনের মধ্য দিয়ে পুনরায় সুযোগ পেয়েছিল ‘স্বাধীন রাষ্ট্র’ গঠনের।

দুর্ভাগ্য! আমাদের ইতিহাস- ব্যর্থতার ইতিহাস।

সর্বশেষ ২০২৪ এর ৩৬ জুলাই এসেছিল ধূমকেতুর মতো। অনেকের মতে, আবাবিল পাখির মতো; ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কংকরের আঘাতে এবার ধ্বংস করবে এ যাবতকালের ব্যর্থতার কালিমা। ধ্বংস হবে পুরনো বন্দোবস্ত। অবসান ঘটবে বহির্বিশ্বের দাদাগিরি আর অভ্যন্তরে বিরাজমান বিকৃত পরিবারতন্ত্রের। সমূলে উৎপাটন হবে ফ্যাসিবাদী মননের শিকড়। একেবারে রিসেট বাটনে চাপ দিয়ে সে গঠন করবে নতুন রাষ্ট্র, নতুন সংবিধান, নতুন বন্দোবস্ত। সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত হবে ইনসাফ। ধর্ম-বর্ণ-জাতিনির্বিশেষে মানুষ গাইবে জীবনের গান। মানুষ তেমনটাই আশা করেছিল।

কিন্তু দিন যেতে না যেতেই মানুষের সে আশায় গুড়েবালি। তারা অবাক বিস্ময়ে দেখলো তাদের ছাত্ররাও কতটা বৈষয়িক হয়েছে। বয়স্কদের মতো অর্থলোলুপ, ক্ষমতালোভী, মিথ্যুক ও প্রতারক হয়েছে। যারা প্রেশার গ্রুপের ন্যায় জনগণের মুখপাত্র হয়ে রাষ্ট্র ও সরকারকে সেনাপতির মতো দিকনির্দেশনা দিতে পারতো। কৈফিয়ৎ চাইতে পারতো। তারা আজ সরকার ও কিংস পার্টি হয়ে জনগণের মুখোমুখি দাঁড়ালো। মুহূর্তের মধ্যে সমাজে তারা তাদের আবেদন হারালো। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বগোত্রীয় তরুণরা তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল। তারা হারালো অপার সম্ভাবনা।

বিশ্বাস হারানো মানুষ সহজে আর সাড়া দেবে না। সমাজ ফিরে যাবে আদিম অবস্থানে!

ইতিহাস বলছে- এ যেন নিয়তি, যা খণ্ডাবার নয়! হয়তোবা এখানেও মানুষের এ আশায় ছিল গলদ, ভেজাল, অপবিত্রতা। যেন নিয়ামতপূর্ণ দোজখভূমিতে বাঙালি- অভিশপ্ত। এর মুক্তি নেই!...

তবে এ-ও আমাদের ইতিহাস- তস্কর যেমন এ জাতিকে কখনো শান্তিতে থাকতে দেয়নি, তেমনি এ জাতিও কখনো তস্করকেও শান্তিতে থাকতে দেয়নি। অতঃপর ঝগড়াপুর-এ ঝগড়াই আমাদের ভবিতব্য।

২৩/১১/২০২৫

লেখক: অ্যাক্টিভিস্ট, লেখক, গবেষক

ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

Ad for sale 270 x 200 Position (2)
Position (2)